ধর্মঘটে অচল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর, মূল জেটি স্বাভাবিক দাবি কর্তৃপক্ষের

২৪ ঘন্টা চট্টগ্রাম ডেস্ক : বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর। ঘাট থেকে খালাসের জন্য সাগরে যায়নি কোন লাইটার জাহাজ। বন্ধ রয়েছে নৌপথের পরিবহণও। 

ফলে বহির্নোঙ্গরে অলস বসে আছে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা ৭৮টি মাদার ভ্যাসেল। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে অলস বসে আছে এক হাজারেরও বেশি লাইটারেজ জাহাজ। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

শনিবার ভোর ৬ টা থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রেখে কর্মবিরতি শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। সকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর নৌঘাটে কোনো লাইটারেজ জাহাজে পণ্য উঠানামা করেনি। সারিবদ্ধভাবে লাইটারেজ জাহাজগুলো নদী বয়াতে বাধা রয়েছে।

তবে বন্দরের মূল জেটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়,  দেশের ৭৫ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় নৌ পথে। মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য নিয়ে লাইটারেজ জাহাজগুলো ঘাটে এবং নদী বন্দরে পৌঁছে দিয়ে আসে।

চাকরির নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবিতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেন নৌযান শ্রমিকরা। এ লক্ষ্যে শ্রমিকরা ১১ দফা দাবীতে ধর্মঘটের পাশাপাশি মিছিল সমাবেশ করছে চট্টগ্রামের ঘাটগুলোতে। ফলে সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পার্শ্ববর্তী ১৬টি ঘাটে অলস বসে আছে শত শত লাইটারেজ জাহাজ এবং অয়েল ট্যাংকার। অথচ এসব জাহাজের ব্যস্ত থাকার কথা ছিল বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাসের কাজে।

চট্টগ্রাম ডব্লিউটিসি’র কো-কনভেনার শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, নৌযান শ্রমিকদের কর্মরিতির ফলে আমদানিকারকদের ড্যামারেজ দিতে হচ্ছে। এক এক মাদারশিপে ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত ড্যামারেজ আছে। এই মাল আনলোড বন্ধ থাকলে সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি হবে।

তবে বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের তথ্যমতে কর্মবিরতি চলাকালেও সচল রয়েছে বন্দর। বহির্নোঙরে অবস্থানরত ৫২টি জাহাজের মধ্যে ৪৭টি জাহাজ থেকে পণ্যবোঝাই চলছে। এসব পণ্যের মধ্যে পাথর, কয়লা, সিমেন্টের ক্লিংকার ও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যও রয়েছে।

বন্দরের ভেতরে জেটিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, জাহাজে কনটেইনার ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। তাছাড়া ইয়ার্ড থেকেও কনটেইনার নিয়মিত খালাস হচ্ছে।

নৌযান শ্রমিকদের আটটি সংগঠনের জোট বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন শুক্রবার মধ্যরাতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ নিয়ে গত এক বছরে তিনবার ধর্মঘটের ডাক দিল ফেডারেশন। নেতাদের দাবি, নৌযান মালিক ও সরকার বারবার ওয়াদা ভঙ্গ করায় তারা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এবার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন না।

তারা বলছেন, ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ১১ দফা উপস্থাপন করা হলেও তাদের মূল দাবি ২০১৬ সালে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে। অন্য দাবিগুলো হলো নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদান, মালিক কর্তৃক খাদ্য ভাতা প্রদান, নৌযান শ্রমিকদের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *