আনোয়ারায় স্বামীর লাথিতে অন্তঃসত্ত্বা নববধূর বাচ্চা নষ্ট

আনোয়ারা প্রতিনিধিঃ স্বামী ফোরকানের ফতোয়া ছিল, তাঁর সঙ্গে সংসার করতে হলে ব্যাবসা করতে বাপের বাড়ির থেকে নগদে ২ লাখ টাকা এনে দিতে হবে এবং সন্তান নেওয়া যাবে না। কিন্তু স্বামী সহবাস বন্ধ না করায় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।

স্বামী ফোরকান নিদান দিয়েছিলেন, বিয়ে আরেকটি করবে আর ভাড়া বাসায় ২য় বউ রাখবে তাই জান্নাতুল এর সন্তান নেওয়া যাবে না। জান্নাতুল ফেরদৌস তার বাড়িতে বুয়ার কাজ করবে। আর তাকে মাদক সেবনের খরচ জোগাড় করে দিতে হবে। সে নিদান মানেননি স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। তাই তাঁর পেটে লাথি মেরে গর্ভের সন্তানকে হত্যার অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি আনোয়ারার ২নং বারশত ইউনিয়ন এর চালিতাতলী এলাকায়। এমন ঘটনার কথা জেনে স্তম্ভিত মেয়ের পরিজন থেকে প্রতিবেশীরাও। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেই গত ২২জুন বুধবার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে অভিযোগ করলেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০২১সালের নভেম্বর এর ২৬তারিখ মাত্র ৬মাস আগে আনোয়ারা ২নং বারশত ইউনিয়নের চালিতাতলী গ্রামের বাসিন্দা গফুরের ছেলে ফোরকানের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুলের।বিয়ের সময় ফার্নিচার বাবদ জনসম্মুখে নগদ এক লক্ষ টাকাসহ পাচশত মানুষ বরযাত্রী খাইয়ে ও কানে, হাতে, নাকে, আংগুলে সব মিলিয়ে ১ভরি স্বর্ন বুঝিয়ে দিয়ে ধুমধামে সামাজিকভাবে বিবাহ দেন মেয়ের পরিবার। কিন্তু বিগত ৬ মাসে ছেলের পরিবার প্রায় ৬০০ বারের বেশি মারধর করেছে। এই বিষয় নিয়ে বহুবার সামাজিকভাবে বৈঠক হয়েছে। উভয় পক্ষের দুই ওয়ার্ডের মেম্বারগন বসে ছেলে ও ছেলের বাবার থেকে একটি মুচলেকা নেয়া হলেও তারা আজোব্দি ঠিক হয়নি। মুছলেখাতে ২ মাসের মধ্যে মেয়েকে সব কিছু কিনা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আর নির্যাতন বন্ধ করবে বলে স্বীকারোক্তি দেয় গফুর ও ছেলে ফোরকান।

জান্নাতুল ফেরদৌসের অভিযোগ, বিয়ের পরেই তাঁর স্বামী ফোরকান ও তার পরিবার গায়ের সকল স্বর্ন খুলে নিয়ে বেচে দেয়। স্বর্ন বেচা টাকা দিয়ে বাবা ও ছেলে চোলাই মদ, গাজা ইয়াবা সেবন করেন বাবা ও ছেলে। মাদকাসক্ত হয়ে বাবা গফুর ও ছেলে ফোরকান গভীর রাতে বাসায় ফিরেন।বাবা গফুর দিবালোকেও মদ খেয়ে পাগলামি করেন। আর আমার স্বামী ফোরকান বাসায় না থাকলে আমার শশুর গফুর বিভিন্ন ভাবে আমাকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেন।বহুবার গায়ে হাত দেন,কাপড় ধরে টানাটানি করেছেন।আমি শশুরের কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে বা প্রতিবাদ জানালে স্বামী ফোরকান প্রচন্ড লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন।এসময়ে পরিবারের অন্য সদস্যরাও আজেবাজে গালিগালাজ করেন। লাঠি এনে দেন ফোরকান কে। ফোরকানের বোন শাহিদা চুল ধরে টানতে থাকেন। আর আমাকে বেশির ভাগ সময়ে তারা খাবার দেন না। আমাকে ক্ষেতে দেয় পচা-বাশি, নষ্ট খাবার গুলি যেগুলি কুকুর কে দেয়া হয় সেইগুলি তারা আমাকে খেতে দেন। তাছাড়া ফোরকান একাধিক মেয়ের সাথে ফোনে ও সরাসরি যোগাযোগ রেখেই চলেছে। একটি মেয়ের সাথে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন সেই মেয়েটির সাথে ফোনে কথা বলার জন্য আমাকে পরামর্শ দেন।আমি তার দেয়া মেয়ের সাথে কথা বলতে অসম্মতি জানালে আমাকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও প্রান নাশের হুমকি দিতে থাকেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস আরো জানান, বিভিন্ন সময়ে ফোরকান বিভিন্ন ‘ফতোয়া’র কথা জানান। জান্নাতুল ফেরদৌসের কথায়, ‘‘স্বামীর ফতোয়া ছিল, তাঁর সঙ্গে সংসার করলেও সন্তান নেওয়া যাবে না।’’ অন্য দিকে, স্বামী সহবাস বন্ধ না করায় বিয়ের চার মাসের মধ্যে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। আর তাতেই চটে যান স্বামী ফোরকান ও তার শশুর বাড়ির মানুষজন। গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করে দিতে হবে বলে নিদান দেন। এই নিদান না মানায় স্বামী ছাড়াও শ্বশুরবাড়ির আরও চার সদস্য তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ। তবে দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করেও গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে চাননি তিনি। তাতেই নাকি রাগ চড়ে যায় ফোরকানের।

গত ১০ জুন মধ্যরাতে প্রচন্ড বাক-বিতণ্ড করে স্ত্রীর পেটে সজোরে লাথি মেরে তার গর্ভে থাকা ৩ মাসের সন্তানকে তিনি ‘হত্যা’ করেন বলে অভিযোগ। পেটে অসহ্য যন্ত্রণার পাশাপাশি একটু একটু রক্তক্ষরণও শুরু হয় জান্নাতুলের।কাকতালীয় ভাবে জান্নাতুলের বাবা পরদিন ১২তারিখ সকালে মেয়েকে দেখতে যান।গিয়ে দেখেন মেয়ের অবস্থা খারাপ।তিনি গিয়ে সবার থেকে ভালো ব্যাবহারের পরিবর্তে কুকুরের মত খারাপ ব্যাবহার পান ফোরকানের পরিবারের থেকে। মেয়েকে কি হয়েছে বাবা আবদুর রাজ্জাক জিজ্ঞাসা করতেই তারা জান্নাতুল কে চুলের মুটি ধরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পরনের এক কাপড়ে বের করে দেয়।মেয়ের বাবা আবদুর রাজ্জাক মেয়ে অসুস্থ জান্নাতুল কে এনে পল্লী চিকিৎসক দেখান।পল্লী চিকিৎসা দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। চমেক হাসপাতালের প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্টের মতে বাচ্চার ব্রুন নষ্ট হয়ে যায় বলে জানা যায়।

জান্নাতুল ফেরদৌসের মা সেলিনা বলেন, অনেক কষ্ট করে আমরা মেয়ে বিয়ে দেই।মেয়ের সুখ আর দেখা হলোনা।‘‘হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও আমার মেয়ের গর্ভে থাকা মৃত তিন মাসের সন্তানকে বার করে কোনও রকম তাকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন।’’ আমি তাদের উচিত বিচার চাই। শারীরিকভাবে আমার মেয়ে খুব অসুস্থ।

জান্নাতুল ফেরদৌসের উকিল জানিয়েছে, জান্নাতুল ফেরদৌসের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করা হয়েছে।বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি আমুলে নিয়েছেন।খুব দ্রুত জান্নাতুল ফেরদৌস তার সকল অপুরনীয় প্রাপ্য ক্ষতিপূরণসহ দাবি করা আসামীর শাস্তি পাবেন বলে আশাবাদী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *