রাজধানীর উত্তরায় গার্ডারে চাপা : হাসপাতাল থেকে আহত নবদম্পতি ছাড়া পেয়েছেন

উত্তরায় বিআরটি’র নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের গার্ডারে চাপায় নিহতদের মরদেহ এখনও ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রয়েছে। একই গাড়িতে গার্ডার পড়ায় আহত নববধূ রিয়া মনি ও হৃদয়কে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া মামলার আসামি পলাতক ক্রেন চালককে ধরতে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

তবে রিয়া মনি ও হৃদয় দুজনেই ডান পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। তাদের কোনো ধরনের কোনো কাটাছেঁড়া বা জখম নেই বলে জানান চিকিৎসক।

এদিকে, হৃদয়ের বাবার মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরে নেয়া হবে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। যাদের উদাসীনতায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, তাদের শাস্তি প্রার্থনা করেছেন স্বজনরা।

গতকাল ১৫ আগস্ট (সোমবার) বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে প্রাইভেট কারের ওপর গার্ডার পড়ায় তাদের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় বের করা হয় নিহতদের মরদেহ। আহত নবদম্পতিকে নেয়া হয় হাসপাতালে। অবশ্য রাতেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তারা।

ফায়ার সার্ভিস জানান, ত্রুটিপূর্ণ ক্রেন দিয়ে লিফটিং করা হচ্ছিল গার্ডারটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, উত্তরা রোডে বিআরটি প্রকল্পের উদাসীনতায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, দুর্ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করেছে বিআরটি থেকে করা তদন্ত দল। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন তারা।

যেভাবে উদ্ধার হলো দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি ও পাঁচ মরদেহ :
উত্তরার জসীম উদ্দীন সড়কে বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন শিশু ও একজন নারী।

এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরও দুজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার ৩ ঘণ্টা পর দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটির ওপর থেকে সরানো হয় গার্ডারটি।

গতকাল ১৫ আগস্ট (সোমবার) সন্ধ্যা ৭টার পর গার্ডার সরিয়ে লাশগুলো বের করে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেট কারের ৫ যাত্রী নিহত হন।

তাদের মধ্যে রয়েছে দুই শিশু ও দুই নারী। এ সময় আহত হন নবদম্পতি রেজাউল করিম হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন হৃদয়ের বাবা রুবেল হাসান (৫০), রিয়ার মা ফাহিমা (৪০), রিয়ার খালা ঝর্না (২৮), ঝর্নার মেয়ে জান্নাত (৬) ও ছেলে জাকারিয়া (৩)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিআরটি প্রকল্পের জন্য নির্মিত ওই গার্ডার একটি ক্রেন দিয়ে সরানো হচ্ছিল। এ সময় গার্ডারটি হঠাৎ করেই রাস্তায় চলমান ওই প্রাইভেট কারটির ওপর পড়ে যায়।

গার্ডারটি ক্রেন থেকে ছুটে যায়নি, বরং ক্রেনের একপাশ উল্টে যায়। ঘটনার তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে চাপাপড়া গাড়িটির ওপর থেকে সরানো হয় গার্ডারটি। এরপর গাড়ির ভেতরে থাকা লাশগুলো একে একে বের করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, দুর্ঘটনার পর গার্ডারের নিচে প্রাইভেটকারটি চাপা পড়ে থাকায় কিছুতেই মরদেহগুলো বের করতে পারছিলেন না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে এক্সক্যাভেটর দিয়ে গার্ডার সরিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের (ঢাকা জোন-৩) উপ-সহকারী পরিচালক সাইফুজ্জামান জানান, ১৫০ টন ওজনের গার্ডার হওয়ায় প্রথমে উদ্ধার কাজ শুরু করা যায়নি।

পরে এক্সক্যাভেটর আনা হয়। এক্সক্যাভেটর আনতে দেরি হওয়ায় উদ্ধার কাজ বিলম্বে শুরু হয়। তিন ঘণ্টা পর এক্সক্যাভেটর দিয়ে গার্ডারটি একটু উঁচু করে প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ দুর্ঘটনায় আহত হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব (১৯) জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা দুর্ঘটনার খবর পান। কিন্তু এতো সময় পরও গাড়ি থেকে মরদেহগুলো বের করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ভেতরে যদি কেউ বেঁচে থেকেও থাকেন তাহলে এতোক্ষণে মারা গেছেন।

রাকিব ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সরকার কীভাবে এভাবে এতো অব্যবস্থাপনার মধ্যে কাজ করছে? আমরা কার কাছে বিচার দিবো! আমাদের অন্তত লাশগুলো বের করে দিক। কিন্তু এখানে তো কোনো উন্নত যন্ত্রপাতিও নেই।

৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন
এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তারকে।

এছাড়াও কমিটিতে আরও আছেন, মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দীন খান ও ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মঞ্জুর মোরশেদ।

১৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) সকাল নয়টার ভেতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

জে-আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *