চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭ তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ স্মরণ সভা, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নই আমাদের অঙ্গীকার’ এই শ্লোগানে জন্ম নেয়া সংগঠনটি দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় দিবসের কর্মসূচীগুলো শ্রদ্ধার সাথে পালন করে আসছে। এ নিয়ে ‘আমুস’ মীরসরাই উপজেলা শাখার উদ্যোগে মঙ্গলবার (৩০ আগষ্ট) বড়তাকিয়া আফরোজা কমিউনিটি গার্ডেনে এই শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বঙ্গবন্ধুর ৪৭ তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে দশটায় বড়তাকিয়া আফরোজা গার্ডেনের সামনে থেকে একটি র্যালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের প্রবেশ মুখ ও উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। উক্ত র্যালি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল-এ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আমুস’ সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমান সদস্য মাহবুব-উর রহমান রুহেল। সংগঠনের উপজেলা সভাপতি নয়ন কান্তি ধুম’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু জাপর। প্রধান অতিথি মাহবুব রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আগস্ট মাস আসলেই দেশজুড়ে অস্থিতিশীল করার একটা পায়তারা চলে৷ দেশে যখন একটা শোকাবহ পরিস্থিতি বিরাজ করে বিএনপি-জামায়াত তখনি চক্রান্তে লিপ্ত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মত দেশের সকল প্রগতিশীল নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকেরা। তারা বার বার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এই বিনপি- জামায়াতের হাত ধরে দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এই আগস্ট মাসে তারা সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ করে স্বাধীন দেশের মাটিকে কলংকিত করেছিল। মানুষের মনে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই জঙ্গিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলেছে শেখ হাসিনা সরকার। মাদকের ছোবল থেকে এই দেশের তরুন সমাজকে রক্ষা করতে হবে বলে তিনি বলেন, আমাদের এই তরুন সমাজের বড় একটা অংশ দেশের জন্য ভূমিকা রাখে। রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই যুবসমাজকে মাদক সন্ত্রাস থেকে বাঁচাতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা আমার পিতার সহযোদ্ধা, আপনাদের কাছে এই দেশ যেমন ঋণী, তেমনি আপনাদের অর্জন না থাকলে আজ এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্বাধীন ভাবে বক্তব্য দিতে পারতামনা, যদি এই দেশ আপনারা (বীর মুক্তিযোদ্ধারা) যু্দ্ধ করে স্বাধীন না করতেন। আপনারা যারা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আছেন আপনাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যারা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছি সবাই ঐক্যের সাথে মিলেমিশে দেশ গড়ার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে। পূর্বের ন্যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর সুখে-দূ:খে সাথে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করে মাহবুব রহমান, সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সামনে থেকে দেশের জন্য আবারো নেতৃত্ব নিতে হবে, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
সংগঠনের সভাপতি নয়ন কান্তি ধুম বলেন, মীরসরাইয়ের মাটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি কিন্তু সরকার তাদের বীর হিসাবে স্বীকৃতি দিলেও এখনো মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের পাশাপাশি নতুন করে প্রতিক্রিয়াশীলদের নিপিড়ন সহ্য করতে হয় মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারগুলোকে। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা তা মেনে নিতে পারিনা। তিনি বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এই দেশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করতে চেয়েছিল খুনিরা। কিন্তু এই বঙ্গবন্ধুর সাহসী সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা তা হতে দেয়নি। পাকিস্তানি হানাদারদের নিকট থেকে নিরাপদে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হতে পারলে স্বাধীন বাংলাদেশে অরক্ষিত হয়ে ঘাতকের বুলেটে স্বপরিবারে নিহত হতে হয়েছে। তিনি বলেন, আজ বাংলার মাটিতে লাখো খন্দকার মোস্তাক জন্ম নিয়েছে তাদের থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সুরক্ষিত করতে হলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ঐক্যবদ্ধভূমিকা পালন করতে তিনি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, পরিবারবর্গ এবং প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মীরসরাই উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার মো. কবির আহমেদ, ডেপুটি কমান্ডার আবুল হাশিম, সাংগঠনিক কমান্ডার ফজলুল করিম, সহকারী কমান্ডার কামাল পাশা, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফেরদৌস হোসেন আরিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক আবুল হোসেন বাবুল, মীরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন ও নূর হোসেন মামুন, ১২ নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি নুরুল মোস্তফা মানিক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন তপু, আমুস উপজেলা শাখার উপদেষ্টা তোফায়েল উল্লাহ চৌধুরী নাজমুল, মেজবাহ উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনেওয়াজ মিয়া মিঠু, দপ্তর সম্পাদক নূর উদ্দীন, প্রচার সম্পাদক ইয়াছিন উল্লাহ, সদস্য মোহাম্মদ গোলাম রাসুল ভূঁইয়া। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সকল ইউনিট কমিটির নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সকল ইউনিটের সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply