চারজনের গ্রুপ। বয়স ২৫ থেকে ৫০। সাধারণ মানুষের মতোই ভদ্রবেশে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরে বেড়ায় তারা রিকশায় চড়ে। চিপাচাপা গলিতে ঢুকে ভাবখানা হয়ে যায় অন্যরকম, চলাফেরায় রুপ নেয় ভিন্ন স্টাইলে আর তখনই নিজেদেরকে যুবলীগ নেতা দাবী করে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন। কথা বলতে বলতেই লোকের পকেট হয়ে যায় ফুটো।
যুবলীগের পরিচয় দেয়া এসব ভদ্রবেশি মুখোশধারীর আসল পেশা ছিনতাকারী। চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্তত শতাধিক ছিনতাই ঘটনার সাথে তারা জড়িত। আর যুবলীগ নেতা পরিচয় বহন করা এসব লোকের মুখোশটি উন্মোচন করেছে নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। অস্ত্রসহ গ্রুপ লিডার নজরুল ইসলামসহ গ্রুপের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করার পর তাদের স্বীকারোক্তিতেই বেরিয়ে আসে এসব অজানা তথ্য।
পুলিশ জানায়, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় গ্রুপটি অস্ত্র নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দ্যেশে নগরীর বৌদ্ধ মন্দির লাভলেইন এলাকায় অবস্থান করছে গোপন তথ্য পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি কাঠের বাটযুক্ত লোহার তৈরি ওয়ান শুট্যার গান, স্টিলের ছোরা, টিপ ছোরা, তাদের ব্যবহৃত একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা, তিনটি বিভিন্ন ব্যাংকের মাস্টার কার্ড ও তিনটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নজরুল ইসলাম (৫০), গাজী মো. তমিজউদ্দিন (৪৮), মো. হাসান ওরফে হারুন (২২) ও মিঠুন নায়ক (২৬)।
এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান। তিনি ছিনতাইকারী চক্রের মূল দলনেতাসহ পুরো গ্রুপকে গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতার ছিনতাকারী চক্রটির মধ্যে নজরুল মুল দলনেতা। নজরুল এর আগে সিএনজি অটো রিকশা চালক ছিলেন। রিকশা চালকের ভেসে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই ঘটনায় সে চিহ্নিত হয়ে যায়। এর আগে পুলিশের হাতে ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধে ৬ বার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন নজরুল।
কারাগার থেকে বের হয়ে আবারো সে ছিনতাই কাজে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেন। তবে এবার খোলশটা একটু বদলে ফেলেছে। ছিনতাইয়ের নতুন কৌশল হিসেবে তমিজ উদ্দিন নামে ৪৮ বছর বয়সী আরো এক ব্যাক্তিকে তার সাথে নিয়েছে। দুজনে নিজেদের যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে রিকশা চালক হাসান ও মিঠুনকে সাথে রেখে নতুন উদ্দ্যেমে নগর জুড়ে ছিনতাইকাজ পরিচালনা করে আসছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, রোববার সন্ধ্যায় নগরীর লাভলেইন এলাকা থেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে অভিনব ছিনতাইকারী চক্রটির পুরো গ্রুপকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
গ্রেফতারের পর চক্রটির দলনেতা জানিয়েছে পাঁচলাইশ এলাকার স্থানীয় কিছু যুবলীগ নেতার সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন সময়ে মিছিল-সমাবেশে যোগ দিতেন নজরুল। সেটাকেই পুজি করে ছিনতাইয়ের নতুন কৌশল হিসেবে নিয়ে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ছিনতাই করতেন।
ওসি বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পোশাকে পরিপাটি হয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা করে ঘুরে বেড়াতো নজরুল ও তমিজ। নির্জন এলাকায় লোকজনকে টার্গেট করে রিকশা থেকে নেমে নিজেদেরকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে কথা বলতেন।
কথা বলার ফাঁকে রিকশা চালক ভেশে ছিনতাইকারী চক্রের অপর সদস্য এবং গ্রুপের অন্য সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার মোবাইল, মানিব্যাগ ও অন্যান্য দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতো। ঠিক এভাবে গত এক মাসে নগরীর কোতোয়ালী, সদরঘাট থানাসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা শতাধিক ছিনতাই করেছে বলে জানান ওসি মহসিন।
রাজীব সেন প্রিন্স..
Leave a Reply