চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে নাশকতার আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ আশংকার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ১৩টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে ১৯ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়। এছাড়া বন্দর এলাকা এবং জ্বালানি তেলের ডিপোসহ স্পর্শকাতর এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আমদানি রপ্তানি ব্যয় বাড়ার সংকটকে পুঁজি করে একটি মহল পরিস্থিতি উস্কে দিতে পারে বলে ধারন করা হচ্ছে। এ কাজে বন্দরের শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক ও ইপিজেড শ্রমিকদের কাজে লাগাতে পারে মহলটি।
এছাড়া আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে বন্দরে নাশকতার আশঙ্কা আছে। নানা ধরনের পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে। আর সরকারবিরোধী চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। এটা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরে মদ, সিগারেটের একাধিক চালান ধরা পড়ছে। এর মানে, জালিয়াতি করে বন্দর দিয়ে অনেক চালান বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য বিপজ্জনক পণ্যের চালানও বেরিয়ে যেতে পারে।
বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো অফডক ইনল্যান্ড ডিপো থাকার কথা নয়। কিন্তু চট্টগ্রামে অবস্থিত ১৯টি কনটেইনার ডিপোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই বন্দরের একেবারে কাছাকাছি এলাকায়। বিপদজ্জনক দ্রব্য ও কাভার্ডভ্যানের যত্রতত্র বিচরণের কারণে বন্দর এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বন্দরের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন ৬’শ ৫০ জন। এছাড়া এক হাজার ৫০ জন আনসার, ২’শ সেনা সদস্য, ২০ পুলিশ সদস্য (সার্বক্ষণিক সহায়তা দেন ৫’শ ৯৩ জন) ও নৌবাহিনীর একজন সদস্য রয়েছে। এছাড়া বন্দরের মালামালবাহী পরিবহণগুলোর ট্রাফিক ব্যবস্থায় প্রতিদিন ২’শ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।
বন্দরের অভ্যন্তরে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার জন্য অফিস রুম থাকলেও বিশেষ একটি সংস্থার জন্য রুম বরাদ্দ নেই। এ বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে বারবার আবেদন করেও ফল আসেনি। তাই বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওই গোয়েন্দা সংস্থা যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বন্দরের নানা চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, প্রতিবছর দুই ঈদের আগে জাহাজ জট হয়। জাহাজ জটের কারণে আমদানিকারকদের পণ্য পেতে সময় লাগে। বর্তমান পণ্য আমদানি কমতির দিকে। সরকার বিলাসীপণ্য ও তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় আমদানি কিছুটা কমছে। তবে শিল্পের ও খাদ্যপণ্যের আমদানি বাড়ছে।
প্রতিবেদনে পতেঙ্গা টার্মিনাল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত বন্দর ব্যবস্থাপনা, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ও রপ্তানির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। বলা হয়, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিতে ধরা খাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা সব সময় অস্বীকার করেন। এ কারণে বিআইএন, আইপি ও এলসি থাকলেও প্রকৃত অপরধীদের আইনের আওতায় আনতে বেগ পেতে হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্দর শ্রমিকরা নোঙ্গর অপারেটর ও সাইফ পাওয়ারটেক অপারেটর কোম্পানি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। সাইফ পাওয়ারটেক ২০০৮ সাল থেকে একচেটিয়াভাবে বন্দর অপারেটর হিসাবে কাজ করছে। তারাই একমাত্র বন্দর অপারেটর, যারা বর্তমানে প্রতিযোগী কাউকে কাজের অনুমতি দিচ্ছে না।
বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি, বন্দরের অনিয়ম বন্ধ, চোরাচালান তালিকাভুক্ত সিএনএফ এজেন্ট সিন্ডিকেট দমন, বন্দরের অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত সার্ভারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কাস্টম হাউজ সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সুপারিশ করা হয়।
বন্দরে বহিরাগতরা প্রবেশ করে চুরিসহ নানা ধরনের অপকর্ম চালাচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে চোর সন্দেহে বন্দরের অভ্যন্তরে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
বন্দরে কে যাচ্ছে, কে আসছে এবং কতক্ষণ অবস্থান করছে সে তথ্য সংরক্ষণের সুব্যবস্থাপনা বন্দর কর্তৃপক্ষের নেই। কনটেইনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমস্যা হলে অটো অ্যালার্ম ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৫৩২ হাজার টিইউইএস এবং দৈনিক মালামাল লোড-আনলোডের সক্ষমতা ৩৫০০ টিইউইএস। পাঁচ হাজার ৫০০ জনবলের বিপরীতে বন্দরের কনটেইনার জেটি আছে ১৩টি। বন্দরে একসঙ্গে জাহাজ ভেড়ানো যায় ১১টি।
আশংকার বিষয়ে বন্দর সচিব মো: ওমর ফারুক ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ কে বলেন, আমরা ইতিমধ্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত হয়েছি, এটি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়, তারা কিসের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন দিয়েছেন সেইটা আমরা জানিনা এই ব্যাপারে আমাদের সাথে কোন আলাপ আলোচনা ও হয়নি তবু আমরা বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
জে-আর
Leave a Reply