২৭১ কনটেইনার বিপজ্জনক রাসায়নিক পন্যেও ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের বিভিন্ন শেডে পড়ে আছে কন্টেইনার ভর্তি বিপদ জনক এসব রাসায়নিক পন্য। এর আগে বন্দর শেডে আগুনের পর তড়িঘড়ি কওে কিছু রাসায়নিক পন্য নিলামে বিক্রি এবং কিছু সরিয়ে নেয়া হলেও রয়ে গেছে আরো ২৭১ কন্টেইনার রাসায়নিক পণ্য।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি ধ্বংসযোগ্য কনটেইনার রয়েছে। এরমধ্যে ২৭১টি কনটেইনারে রাসায়নিক পণ্য রয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ফর্মালডিহাইডের মত ঝুঁঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পণ্য এক শেডের নিচে। এভাবে একসঙ্গে নানা ধরনের রাসায়নিক পণ্য থাকাটা বন্দরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর।
জরাজীর্ণ জারে খোলা অবস্থায় পড়ে থাকা এসব রাসায়নিক পণ্যের গায়ে নেই মেয়াদোর্ত্তীর্ণের তারিখও। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি রাসায়নিক পণ্যগুলো ঝুঁঁকিপূর্ণ নয়। তবে আগামী সোমবার বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস নিয়ে একটা বৈঠক করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা কিভাবে নিরাপদে পণ্যগুলো ধ্বংস করবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক মুহাম্মদ মেহেদী ইসলাম খান বলেন, আমরা ৫৪ টি নরমাল রাসায়নিক পণ্য নিয়ে কাজ করি। সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ফর্মালডিহাইড নামের রাসায়নিক পণ্যগুলো নিয়ে আমরা কাজ করি না। তবে যেহেতু রাসায়নিক এ পণ্যগুলো খোলা জারে আছে, তাই এটি অবশ্যই ঝুঁঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে শেডের ভেতরে সালফিউরিক এসিড পরে আছে। এখন সেখানে কেউ গেলে তার চামড়া পুড়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরের ‘জে’ গোলার ভেতর চার ধরনের ঝুঁঁকিপূর্ণ এসিড পণ্য রয়েছে। এরমধ্যে ৫৫টি জারে ২ হাজার ১০১ কেজি সালফিউরিক এসিড রয়েছে। পাশাপাশি ফসফরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড ও হাইড্রো এসিড মিলে মোট ১৩৮ কেজি পণ্য রয়েছে। একই শেডে আট কেজি পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ১শ লিটার ফর্সালডিহাইড রয়েছে।
তাছাড়া বন্দরের ‘আই’ শেডে ১০ কোটা ফ্যানল, ‘কে’ শেডে ৫০ কেজি এসিটিক এসিড, ‘এম’ শেডে ১ হাজার ৯৯৫ কেজি ফসফরিক এসিড, ‘সি/৭’ শেডে ৩২ কেজি ওয়াশিং কেমিক্যাল, ‘সি-২’ শেডে ৩৭৮ কেজি ডায়েসিড এইচপি ও ‘পি’ শেডে ২৭০ কেজি হাইড্রোক্লোরিক এসিড রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের শেডে থাকা রাসায়নিক পণ্যগুলো দ্রæত বন্দর থেকে সরানোর বিষয়ে আমাদের চিন্তা রয়েছে। কাস্টমস প্রতি মাসে নিলামের আয়োজন করছে। সেখানে কিছু পণ্য বিক্রি হয়। যেগুলো একেবারেই বিক্রি হয়না সেগুলো ধ্বংস করা হয়। ইতোমধ্যে ২৭১ কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংসের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে রাসায়নিক পণ্য যাতে বন্দর ইয়ার্ডে না নেমে জেটিতে ভেড়া জাহাজ থেকে সরাসরি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরিতে করে আমদানি কারকের কারখানায় নেয়া যায় তার উদ্যোগও আমরা নিচ্ছি। এতে করে বন্দর আরো সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে।
গত ২৮ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক বিষয় নিয়ে বন্দর ভবনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না হওয়া দীর্ঘদিনের পুরনো পণ্য সরাতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে আহŸায়ক (সার্বিক) এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনারকে সদস্য সচিব করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার ওমর মবিন বলেন, বন্দরের বিভিন্ন শেডে পরে থাকা রাসায়নিকসহ অন্যান্য পণ্যগুলো আমরা প্রথমে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করি। বিক্রি না হলে তা ধ্বংস করে ফেলা হয়।
জে-আর/এ-জে
Leave a Reply