আন্তর্জাতিক বাজারে বেশিরভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমলেও দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম ৬ থেকে ১৯ শতাংশ বাড়লেও দেশে বেড়েছে ১০ থেকে ৬৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক ও দেশের পণ্যবাজারের দামের এমন ব্যবধানের তথ্য উঠে এসেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। এতে করে সংকটে আছে গরিব-নিম্ন-মধ্যবিত্ত সব পেশার মানুষ।
বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশে চালের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, আটা ৮ গুণ: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল এক বছরে বিশ্ববাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ, তবে দেশে বেড়েছে ১৩ শতাংশ।
মাঝারি চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৭ শতাংশ বাড়লেও দেশে বেড়েছে ১০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। বিশ্ববাজারে এ মানের চালে দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের কিছু বেশি। বিপরীতে বাংলাদেশে বেড়েছে ১৯ শতাংশ।
তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, এক বছরে বিশ্ববাজারে গড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। তবে দেশে বেড়েছে দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১৪ শতাংশ। একইভাবে এক বছরে আটার দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে ৮ শতাংশ। তবে বাংলাদেশে বেড়েছে এর ৮ গুণের বেশি, অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ কে এম আলী আহাদ খান সাংবাদিকদের জানান, বিশ্ববাজার পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যসহ অন্য জিনিসপত্রের দাম সমন্বয় করার দায়িত্ব ট্যারিফ কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।
তাদের সঙ্গে তিন-চার দিন আগে বৈঠক হয়। বিশ্ববাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে তাদের ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা বিচার-বিশ্নেষণ করে দেশের বাজারে পণ্যের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হবে।
এদিকে মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে বাংলাদেশে দাম না কমে উল্টো অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশ্ববাজারে ডালের দাম গড়ে কমেছে ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে বড় দানার মসুর ডালের দাম ৩৯ শতাংশ এবং মাঝারি ও ছোট দানার ডালের দাম প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়েছে।
গত এক বছরে দেশে ৯ শতাংশ দাম বেড়েছে পেঁয়াজের, যা বিশ্ববাজারে কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে গড়ে দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ। এ সময় দেশে চিনির দামও বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। অথচ বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল পাঁচ বছরে খোলা তেলের লিটারে ৭৫ টাকা ৫০ পয়সা এবং বোতলজাত তেলে ৮৩ টাকা ২৫ পয়সা দাম বেড়েছে।
রডের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে ১৪ শতাংশ, দেশে বেড়েছে ১৬ শতাংশ । দেশে এসএম রডের চাহিদা রয়েছে ৮০ লাখ টনের, যার সিংহভাগই উৎপাদন হয় দেশে। বিশেষায়িত কিছু রড আমদানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৪ দশমিক ৬ লাখ টন।
এ বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে রড উৎপাদনের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ স্টিলের দাম বাড়লেও গত জুলাইতে তা কমে দেড় বছর আগের অবস্থানে ফিরে যায়। জুলাইয়ে কমে প্রতি টনের দাম ৪০০ ডলারের নিচে নেমে আসে। অর্থাৎ গত এক বছরে বিশ্ববাজারে রডের দাম কমেছে ১৪ শতাংশ। তবে বাংলাদেশে দাম না কমে বরং বেড়েছে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ।
দেশে বছরে ৩৩৬ লাখ ৫০ হাজার টন সিমেন্টের ব্যবহার হয়, যার সিংহভাগই স্থানীয়ভাবে আমদানি হয়। রডের মতো বিশেষায়িত কিছু সিমেন্ট আমদানি হয়। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিশ্ববাজারে এক বছরে দাম ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়লেও দেশে বেড়েছে ৩১ শতাংশ।
এদিকে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ডলারের দাম বাড়ার কারণে কিছু খাতের ব্যবসা লোকসানে রয়েছে। এ ছাড়া কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদারের কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে এখন বিশ্ববাজারে দাম কমছে, ভোক্তারা এর সুফল পাবেন আরও দেড় থেকে দুই মাস পর।
চালের দাম বাড়ার পেছনে মূল কারিগর কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদার বলে জানান উৎপাদনকারীরা। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচআর খান পাঠান সাকি বলেন, মিল মালিকরা ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে আড়তদারদের মোটা চাল সরবরাহ করে। সেই চাল পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা হয়ে তিন হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে যায়। ফলে দাম বেড়ে যায়। তবে এত দাম বাড়ার কোনো যুক্তি নেই।
জে-আর/জে-এম
Leave a Reply