এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা

ফাইনালের আগে বেশ আলোচনা হচ্ছিল টস নিয়ে। ইতিহাস বলছিল, টস জিতলেই যে আরব আমিরাতের মাটিতে ম্যাচ জেতা হয়ে যায় অনেকটাই! সেই টসে আজ জিতেছিল পাকিস্তান, নিয়েছিল ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত। টুর্নামেন্টে টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া, এরপর রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার যে ধারা চলে আসছিল, তাতে পাকিস্তানের জয়টাকেই মনে হচ্ছিল সম্ভাব্য নিয়তি।

বিশেষ করে ম্যাচের প্রথম ১০ ওভারের পর তো বটেই! তবে সব পাশার দান উল্টে দিয়ে অবশেষে শ্রীলঙ্কাই জিতেছে আজ, তাতে পাকিস্তানের স্বপ্ন ভেঙে এশিয়া কাপটাও ষষ্ঠবারের মতো উঠে গেছে লঙ্কারদের ট্রফি কেসে।

কথায় বলে, উঠন্তি মুলো নাকি পত্তনেই চেনা যায়। তবে আজকের ম্যাচে সেটা চেনা যায়নি মোটেও। শুরুর ওভারে নাসিম শাহর কুশল মেন্ডিসের ওভাবে স্টাম্প উপড়ে ফেলা, এরপর পাওয়ারপ্লেতে হারিস রউফের গতির কাছে লঙ্কান টপ অর্ডারের মুখ থুবড়ে পড়া দেখে কে ভেবেছিল শেষ হাসিটা হাসবে শ্রীলঙ্কা?

একজন অন্তত ভেবেছিলেন; শুধু ভাবেনইনি, স্রোতের বিপরীতে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েও গিয়েছিলেন। তথৈবচ এক পাওয়ারপ্লের পর ১০ ওভারের আগেই ৫ উইকেট খোয়ানো শ্রীলঙ্কাকে ভানুকা রাজাপাকশেই কক্ষপথে ফিরিয়েছেন দারুণ প্রতি আক্রমণের কৌশলে।

শুরুতে ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গার সঙ্গ পেয়েছিলেন, ২১ বলে তার ৩৫ রানের ইনিংস বলছে, প্রতি আক্রমণের গোড়াপত্তনে তার ভূমিকাটাও কম নয়। তবে দলীয় ১১৬ রানে তিনি যখন ফিরলেন, এরপর লঙ্কানদের ইনিংসটা প্রায় একাই টেনেছেন ভানুকা। শাদাব খানের কল্যাণে দুবার ‘জীবন’ পেয়েছেন বটে, তবে এরপর তিনি দেখিয়েছেন কী করে ফেরত পাওয়া জীবন কাজে লাগাতে হয়। ৪৫ বল খেলে তিনি করেছেন ৭১ রান, তাতেই পাকিস্তানের সামনে ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় লঙ্কানরা।

লঙ্কানদের শিরোপাজয়ের উঠন্তি মুলোটা চেনা যায়নি পাক ইনিংসের শুরুতেও। দিলশান মাদুশাঙ্কার করা প্রথম ওভারে যে কোনো বৈধ বল মাঠে গড়ানোর আগেই যে পাক স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে গিয়েছিল ৯ রান!

ফাইনালের মতো মঞ্চে এমন শুরু যে কোনো দলকেই ভড়কে দিতে যথেষ্ট। তবে লঙ্কানদের পারেনি। তাদের যে একজন প্রমোদ মাদুশান ছিলেন! তার কল্যাণেই পঞ্চম ওভারে বাবর আজমকে তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা, এক বল পর ফখর জামানকেও।

সেই জোড়া ধাক্কা সামলাতে ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান আর চারে নামা ইফতিখার আহমেদ রীতিমতো খোলসেই ঢুকে পড়েছিলেন। পাকিস্তান উইকেট খোয়াচ্ছিল না বটে, কিন্তু আস্কিং রেটটা তখন বেড়ে যাচ্ছিল চড়চড় করে। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে যখন ইফতিখার ফিরছেন ওয়ানডে মেজাজে ৩১ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে, তখন পাকিস্তানের রান তিন অঙ্কই ছোঁয়নি।

৪০ বলে তখন দলের দরকার ছিল ৭৮ রান। এমন পরিস্থিতি থেকে পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষেই ম্যাচ বের করেছে সুপার ফোরে। ধারণা করা হচ্ছিল, আজও বুঝি ওভাবেই উতরে যাবে বাবরের দল। তবে আজ আর সম্ভব হয়নি, পাকিস্তানের মিডল অর্ডার চাপের মুখে ভেঙে পড়েছে রীতিমতো তাসের ঘরের মতো। ৩২ রানের ব্যবধানে খুইয়েছে সাত উইকেট; আগের সব ম্যাচের নায়ক আসিফ আলী, শাদাব খান, খুশদিল শাহরা রিক্ত হাতে ফিরেছেন আজ, পাকিস্তানের হারটা অবধারিত হয়ে গেছে তখনই। বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতার, শেষ বলে হারিস রউফকে বোল্ড করে সেটাও সেরেছেন চামিকা করুণারত্নে, ১৪৭ রানে শেষ হয় পাকিস্তানের ইনিংস। ২৩ রানের জয় নিয়ে শ্রীলঙ্কা মাতে শিরোপার উৎসবে। আর পাকিস্তানের এশিয়া কাপ শিরোপার অপেক্ষাটা বাড়ে আরও।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *