আগের চার কোটি টাকা জলে : ১২ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প

চট্টগ্রাম নগরীর জাতিসংঘ পার্কে আধুনিকায়নে আগের চার কোটি টাকা জলে গেলেও নতুন করে নেয়া হয়েছে প্রায় পৌনে ১২ কোটি টাকার প্রকল্প। পার্কটিতে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ জন্য পূর্বের চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি সুইমিংপুল ও একটি জিমনেশিয়াম ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। গত ৪ জুলাই গণপূর্তের জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান উন্নয়ন’ নামে এ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ আগামী ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে গণপূর্তের চিঠি পাওয়ার পর সিটি করপোরেশন সুইমিংপুল-জিমনেশিয়াম অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ পার্কে গণপূর্ত অধিদপ্তর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য সুইমিংপুল ও জিমনেশিয়াম ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এগুলো অপসারণের জন্য চলতি মাসেই নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। ঠিকাদার নিয়োগের এক মাসের মধ্যে স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হবে।

প্রকল্পের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে গতমাসের শুরু দিকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছেন। এখন চট্টগ্রামের গণপূর্ত অধিদপ্তর দরপত্র আহŸান করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে পার্কে থাকা দুটি সুইমিংপুল ও একটি জিমনেশিয়াম অপসারণ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মেয়রকে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, জাতিসংঘ পার্কের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। পার্কের বিদ্যমান স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে ফেলতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্যবহার উপযোগী ও আধুনিক সবুজ উদ্যান স্থাপনের জন্য সুপারিশ করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন।

প্রকল্পের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ২ দশমিক ২৭ একর জায়গার ওপর জাতিসংঘ পার্কের অবস্থান। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না করায় উদ্যানটি বর্তমানে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে উদ্যান ৩ থেকে ৪ ফুট পানির নিচে ডুবে থাকে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে গণপূর্তের মালিকানা দ্ব›েদ্ব উদ্যোগটি স্থবির হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য তা নিষ্পত্তি হয়।নতুন প্রকল্পের আওতায় সীমানাপ্রাচীর, প্রবেশ ফটক, অফিস, দোকান, টিকিট কাউন্টার ও শৌচাগার নির্মাণ করা হবে। হাঁটার জন্য থাকবে আলাদা পথ। বসার জন্য থাকবে আসন। থাকবে ঝরনা। এ ছাড়া উদ্যানে আসা শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সভায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, জিমনেশিয়াম-সুইমিংপুল পরিকল্পিত ও মানসম্মতভাবে নির্মাণ করা হয়নি।

জাতিসংঘ উদ্যানের দুটি অংশ। একটি অংশে রয়েছে জিমনেশিয়াম ও সুইমিংপুল। জিমনেশিয়াম-সুইমিং পুল সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মূল ফটকে সব সময় তালা ঝোলানো থাকে। ভেতরে প্রবেশের সুযোগ নেই। সুইমিংপুল দুটি ময়লা পানিতে ভর্তি।

উদ্যানের আরেকটি অংশের এক পাশে বৃষ্টির পানি জমে আছে। বসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মাটির স্তুপ ফেলা হয়েছে। এর মধ্যেই বিকেলে লোকজন ঘুরতে আসে।

এদিকে সুইমিংপুল-জিমনেশিয়াম পরিকল্পিত ও মানসম্মতভাবে নির্মাণ করা হয়নি গণপূর্ত অধিদপ্তরের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র মনজুর আলম। তিনি বলেন, তাঁর সময়ে প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়েই পরিকল্পিতভাবে সুইমিংপুল-জিমনেশিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে।

জিমনেশিয়াম ভবনটি সাত হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। তবে জিমনেশিয়ামের ভেতরে শরীরচর্চার কোনো সরঞ্জাম নেই।

২০১৫ সালের জুন মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনাগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। একই বছরের জুলাইয়ে সিটির নতুন মেয়রের দায়িত্ব নেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়র বদলের পর পার্কটির সুইমিংপুল-জিমনেশিয়াম কোনো কাজে লাগানো হয়নি। ২০১৬ সালে পার্কের মালিকানা নিয়ে গণপূর্তের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বিরোধ দেখা দেয়।

জে-আর/জে-এম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *