গুলি ও মর্টার সেলের বিকট শব্দে আতংকিত সীমান্তবাসী 

আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে থেমে থেমে তুমুল গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষ চলছে। মাঝে মধ্যে আর্টিলারি ও মর্টার শেলের গোলার বিকট শব্দ কানে আসছে। গুলির শব্দে আতঙ্ক আশ্রয় শিবির। বাংলাদেশের তুমব্রæ থেকে ওপারের মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সীমান্তবাসী। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল গোলা বিস্ফোরণের আঘাতে এক রোহিঙ্গা নিহত এবং পাঁচজন আহত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত অঞ্চলে।

অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রটি সরিয়ে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারের কুতুপালং স্কুলে স্থানান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার লাগাতার গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও শনিবার সকাল থেকে গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের কোনো শব্দ শোনা যায়নি বলে জানিয়েছেন সীমান্তবাসীরা।

তবে সীমান্ত সুরক্ষায় সতর্কাবস্থায় প্রহরায় নিয়োজিত রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি। সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজি বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রটি সরিয়ে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।

মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরিত হয়ে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। তার আগে সীমান্তের জিরো লাইনে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে অন্ন্যাথাইং নামে এক বাংলাদেশির পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রæ সীমান্তের কোনাপাড়া নোম্যান্সল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী কোনাকখাল এলাকায় ফের তিনটি মর্টারশেলের গোলা এসে পড়েছিল শুক্রবার রাত ৮টায়। সীমান্তের এপারে এসে পড়েছিল ভারি অস্ত্রের গুলিও।

এ সময় মর্টারশেল গোলা বিস্ফোরিত হয়ে রোহিঙ্গা শিশুসহ চারজন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর মো. ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। আহত পাঁচজনের অবস্থাও গুরুতর। তারা কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হতাহতরা সবাই কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত রোহিঙ্গা।

এদিকে বাংলাদেশ-মায়ানমার তুমব্রæ সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যাকে (২৩) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

উইনু থোয়াইং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রæ হেডম্যান পাড়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অংক্য থোয়াইন তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে। শূন্যরেখার ৩৫ নম্বর পিলারের কাঁটাতারের কাছে শুক্রবার বিকালে গরু আনতে গিয়ে তিনি স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হন। তার বাম পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, মাইন বিস্ফোরণে আহত একজনকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে তিনি ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের সীমানার পিলার ৩২, ৩৪, ৩৫-এর ওপারে বৃহস্পতিবার থেকে মিয়ানমারে আবারো গোলাগুলি শুরু হয়। শুক্রবার সারাদিন থেমে থেমে চলে গুলি ও মর্টার সেল নিক্ষেপের ঘটনা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তুমব্রæর স্থানীয় বাসিন্দা সরওয়ার ও শুন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে আমাদের তুমব্রæ এলাকার মানুষের ঘুম ভাঙে মিয়ানমারের ভিতরে বিস্ফোরণ ও গুলির আওয়াজে।

তারা আরও বলেন, গত কয়েক দিন ধরে চলা গোলাগুলি দুপুরের আগে থেমে যেত, কিন্তু আজকে দুপরেও বন্ধ হয়নি। ভোর সাড়ে ৫টায় হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

আশ্রয় শিবিরের কাছাকাছি গোলাগুলি হওয়ায় আতঙ্ক বেশি। তবে আকাশে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টারের ওড়াউড়ি দেখা যায়নি।

ঘুমধুম ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টু বলেন, তিন দিন ধরে সীমান্তে গুলাগুলি বন্ধ ছিল। আজ আবারও ভোর সাড়ে ৫টা থেকে মিয়ানমারে গোলাগুলি হচ্ছে। গুলির বিকট শব্দ এপারে আসছে। আতঙ্কে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না এলাকার মানুষ।

সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গত ৩১ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী টানা প্রায় সাত দিন স্থল ও আকাশপথে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছিল। আরাকান আর্মির লক্ষ্যবস্তুতে ছোঁড়া হয়েছে শত শত আর্টিলারি, মর্টার শেল ও বোমা।

এ সময় বাংলাদেশের ভূখন্ডেও মর্টার শেল এসে পড়ার ঘটনা ঘটে। এরপর দুই দিন বিরতি দিয়ে বৃহস্পতিবার ১৫ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায় আবার দুপক্ষের মুহুর্মুহু গোলাগুলি শুরু হয়।

জে-আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *