রুদ্ধ্বশ্বাস ম্যাচে টাইগারদের জয়

পেন্ডুলামের মতো ম্যাচটা দুলছিল দুই দিকেই। জিততে পারে যে কেউ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ১৬ রানের। সাকিব বোলিংয়ে আনেন মোসাদ্দেককে। প্রথম ৫ বলে দুই উইকেট নিয়ে ১১ রান খরচা করেন তিনি। শেষ বলে জিম্বাবুয়ের ব্যাটার ব্লেসিং মুজারাবানি। শেষ বলেও উইকেট পেলেন মোসাদ্দেক। আউট ধরে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়রাও মাঠ ছেড়ে উঠে যায়। কিন্তু রিপ্লাইতে দেখা যায়, বল স্ট্যাম্পে আসার আগেই বল ধরে ফেললেন নুরুল হাসান সোহান। ফলে থার্ড আম্পায়ার রিভিউ করে দিলেন নটআউট এবং ঘোষণা করলেন নো বল। ১ রান যোগ করে দুই দলকে আবারো মাঠে নামিয়ে আনা হয় এবং ফ্রি-হিট দিয়ে শেষ বলটি করতে বলা হয়। শেষ বলে মুজারাবানি কোনো রান করতে পারেননি। রুদ্ধশ্বাস এই ম্যাচে বাংলাদেশের করা ১৫০ রানের জবাব দিতে নেমে ১৪৭ রানে থেমে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ফলে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ৩ রানের নাটকীয় জয়।

আগে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। এই জয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে এই প্রথম একাধিক জয় পেল বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই এটা বাংলাদেশের সেরা আসর।

রান তাড়া করতে নেমে তাসকিনের ২ ওভারে দুই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। নিজের দ্বিতীয় বলে মাধেভেরকে ফেরান বাংলাদেশের ডানহাতি পেসার। ৩ বলে ৪ রান করেন মাধেভেরে। তাসকিন তার দ্বিতীয় ওভারে পান আরেকটি উইকেট। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ক্রেইগ আরভিনকে সোহানের ক্যাচ বানান তাসকিন। ৮ রান করেন জিম্বাবুয়ান অধিনায়ক।

তারপর মুস্তাফিজ ম্যাজিক। আগের দুই ম্যাচে উইকেট পাননি মুস্তাফিজ। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেকে ফিরে পেলেন কাটার মাস্টার। এক ওভারেই তুলেন ২ উইকেট। মিল্টন শুম্বাকে দিয়ে শুরু। এবার শূন্যতেই সিকান্দার রাজাকে পথ দেখিয়ে স্বস্তি এনে দেন গ্যালারিতে। বাংলাদেশের জন্য তিনি হতে পারতেন বড় যম। এরপর দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে ফিরতেই আরেকটি জুটি ভাঙলেন তাসকিন। সোহানের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান রেজিস চাকাভাকে। তার বিদায়ে ভাঙলো ৩৪ রানের জুটি। সুপার টুয়েলভ পর্বে তাসকিনের এটি অষ্টম উইকেট।

১৯তম ওভারে দুর্দান্ত ব্রেকথ্রু আনেন সাকিব আল হাসান। শন উইলিয়ামস সিঙ্গেল নিতে গিয়ে তার সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন। ৬৪ রানে থামেন তিনি। ১৩তম ওভারে তার ক্যাচ মিস করেছিলেন হাসান মাহমুদ। জীবন পেয়ে ফিফটি তুলে নেন রায়ান বার্ল।

বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান দুটি ও মোসাদ্দেক হোসেন একটি করে উইকেট নেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৫০ রান করে টাইগাররা। ব্যাটিংয়ে নেমে এনগারাভার চতুর্থ বলে প্রথম চারের দেখা পায় বাংলাদেশ। শান্ত তার পরের বাউন্ডারি মারেন দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে। কিন্তু সৌম্য সরকার রানের খাতা খুলতে পারেননি। নিজের দ্বিতীয় বলে ডাক মারেন তিনি। মুজারাবানির বলে রেগিস চাকাভার হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য। ১০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সৌম্যর বিদায়ের পর শান্তর সঙ্গে দলের হাল ধরেছিলেন লিটন। দুই বাউন্ডারিতে ভালো কিছুর আভাসও দিয়েছিলেন। তবে ষষ্ঠ ওভারে অহেতুক স্কুপে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন লিটন। ১২ বলে ৩ চারে ১৪ রান করেন তিনি। শান্তর সঙ্গে লিটনের জুটি ছিল ২২ রানের। দুই উইকেট হারিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ইতিবাচক ব্যাট করতে থাকেন ওপেনার শান্ত ও দলনেতা সাকিব। এ সময় দুজনের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৩ বলে ৫৪ রান। এরপর শেন উইলিয়ামসের করা বলে মুজারাবারি হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। ২০ বলে ২৩ রান করে ফেরেন সাকিব।

দলীয় ৯৫ রানে সিকান্দার রাজার বলে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পেলেন নাজমুল হোসেন। ৪৫ বলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন শান্ত। চলতি আসরে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই প্রথম পঞ্চাশ। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ১১ ম্যাচ পর বাংলাদেশের কোনো ওপেনারের ফিফটি করলেন। গত ৩১ জুলাই ২০২২, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ৫৬ করছিল লিটন দাস।

শেষ দিকে আফিফ হোসেন ১৯ বলের ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংস খেললে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫০ রান তোলে। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট নেন ব্লেসিং মুজারবানি এবং রিচার্ড এনগ্রাভা। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন সিকান্দার রাজা এবং শন উইলিয়ামস।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *