রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পর রাজাকারদের তালিকার প্রয়োজনটা কী? এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বলা হচ্ছে তালিকা নাকি পাকিস্তানের। পাকিস্তানের তালিকায় তো এদেশের তালিকা হবে না। এই তালিাকায় আসল রাজাকারদের নাম বাদ পড়েছে।’
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে একটি প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে প্রকৃত রাজাকারদের বাদ দিয়ে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজাকারদের তালিকা তৈরি করেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় দিবসের র্যালি উদ্বোধনের পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি— এই সরকার অন্যায় ভাবে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে, জোর করে জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে। আজকে আমরা দেখতে পাই— আমাদের যেই ভাই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে সেই ভাই’ই গুম হয়ে যাচ্ছে। চার-পাঁচ বছর পার হয়ে যায় কিন্তু আমাদের সেই ভাইয়দের সন্তানেরা তাদের পিতার খোঁজ পায় না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে— তারা মুক্তিযুদ্ধের ধারক বাহক কিন্তু এরাই দেশের সকল গণতন্ত্র হত্যা করেছে। এরা ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করে দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছিল। ৭৫ আওয়ামী লীগের সময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল এবং মানুষ না খেয়ে মারা গেছিলো, সেই আওয়ামী লীগ এখন আবার জোর করে ক্ষমতায় চেপে বসেছে। আমাদের লক্ষ লক্ষ দেশ প্রেমিক মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে এই দেশকে কারাগারে পরিণত করেছেন। তারা আমাদের সকল অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় আছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই র্যালির নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার, যিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী। যিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। কিন্তু আজকের দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে দেশনেত্রীকে ছাড়াই আমাদের এই র্যালিতে অংশ নিতে হচ্ছে।’
এ সময় বিএনপি মহাসচিব দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত করে আনবো ইনশাল্লাহ। আপনারা সকল বিভেদ ভুলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য একটি ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলুন এবং এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করুন।’
এ সময় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিল, আজকে দুঃখের সহিত বলতে হয় সেই মূল চেতনা ‘গণতন্ত্র’ বাংলাদেশে ভুলণ্ঠিত।’
তিনি বলেন, ‘একটি মিথ্যা মামলায় সরকারের নির্দেশে মাদার অফ ডেমোক্রেসি গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি জামিনপাপ্য হলেও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র একব্যক্তি ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য, এদেশের সকল কিছু ধ্বংস করে বর্তমান সরকার লুটেরা অর্থনীতি তৈরি করেছে। তাই আজ কেউ শান্তিতে নেই। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে না পারলে, আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে পারবো না, দেশের গণতন্ত্র মুক্তি হবে না। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে।’
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। আসুন আমরা আজ মরি বাঁচি (ডু অর ডাই) শপথ নেই, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করি।’
র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আব্দুল হাই, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
এছাড়া অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান টুকু,টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, কৃষক দলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, মৎসজীবী দলের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম,তাঁতীদলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply