অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা সেলিম প্রধান গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে আরো চমকপ্রদ সব তথ্য।অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় রিমান্ডে থাকা বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ডান হাত ছিলেন সেলিম প্রধান। এছাড়া বাবা হান্নান প্রধানসহ তার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে সেলিমের রয়েছে দারুন সখ্যতা। যা এখনো আর্থিক লেনদেন ও নানা অনৈতিক কর্মকাল্ডে দুজনের সম্পর্ক টিকে রয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার মনিপুরীপাড়ার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া আটক হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে লোকমানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে গোপনে দেশ ত্যাগের উদ্দ্যেশে যাত্রীবাহী বিমানটি ছাড়ার আগ মূর্হুতে তাকে আটক করা হয়।
জানা যায়, বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার হাত ধরেই মোহামেডান ক্লাবের সহসভাপতির দায়িত্ব পান সেলিম। তবে দায়িত্ব পালনকালেও লোকমানের ক্যাশিয়ার হিসেবেই নিয়োজিত ছিলেন সেলিম। তাছাড়া লোকমানের হাত ধরেই রমরমা ক্যাসিনো ব্যবসা চালু করেন সেলিম প্রধান। শুরু করেন অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো ব্যবসা।
নারায়নগঞ্জের বাসিন্দা সেলিম বর্তমানে থাকতেন ঢাকার মোহাম্মাদপুরে নূরজাহান রোডের একটি বাসায়। সেখান থেকেই পরিচয় লোকমানের সাথে। শুরু হয় অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরাশেন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার বলেন, অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে ক্যাসিনো খেলায় জুয়ারিদের উদ্বুদ্ধ করতেন সেলিম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুলেছিলেন গোপন ক্যাসিনো। এসব অর্জিত টাকা পাচার করতেন বিদেশে।
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, লোকমান ছাড়াও সেলিম প্রধানের সাথে অন্যতম ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে। যার হাত ধরেই ক্যাসিনো থেকে আয় করা কোটি কোটি টাকা তিনি বিদেশে পাচার করতেন। আর এ টাকার বড় একটা অংশ যেত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। এমনকি প্রতি মাসে তারেক রহমানকে এক কোটি টাকা পাঠাতেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। থাইল্যান্ডে সেলিমের নিজস্ব বাড়ি ও হোটেল রয়েছে বলেও সূত্র পেয়েছে র্যাব।
জানা যায়, ক্যাসিনো ব্যবসার পাশাপাশি অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সেলিম প্রধান। তারেকের নৈশ পার্টিতে সুন্দরী নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চত করতেন এ সেলিম। এছাড়া বিউটি পার্লারে যেসব ভিআইপিদের আনাগোনা ছিল, তাদের মনোরঞ্জনের জন্য সেলিম ইউরোপিয়ান দেশগুলো থেকে তরুণীদের নিয়ে আসতো বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, অনালাইনে কয়েন বিক্রি করে ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন সেলিম। এ ব্যবসার জন্য প্রধানগ্রুপ নামে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। যেখানে উল্লেখ আছে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর লাইভ ক্যাসিনো মার্কেট পি২৪ লিমিটেড নামের গেমিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডের ১১/এ বাংলাদেশ অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করা হয় ওয়েবসাইটে। কর্পোরেট অফিসের ঠিকানায় উল্লেখ করা হয় ডি-১ মমতাজ ভিশন, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোড ১১/এ। এছাড়া বিদেশি ঠিকানায় ১৬৫/৯৬ মো ১০, সুরাসাক, শ্রী রাখা, চনবুন থাইল্যান্ড, ২০১১০ ব্যবহার করা হয়েছে।
সেলিম আটক হওয়ার পর তার দেয়া তথ্যমতে যে ভবনে পি২৪ এর অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন, গতকাল সোমবার রাতে র্যাব গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর সড়কের ১১/এ নম্বর অনুযায়ী ওই ভবনে অভিযান চালায়।
সেলিমের গুরু বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে আরো দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। পূর্বের রিমান্ড শেষ হলে সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে আবারও ৫ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। পরে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। (সুত্র : একুশে টিভি)
Leave a Reply