মিরসরাইয়ে ৩০ হাজার টাকায় শিশু যৌন নির্যাতনের বিচার

মিরসরাই প্রতিনিধি::::মিরসরাইয়ে এক মাদ্রাসা শিশু শিক্ষার্থীকে ষাটোর্ধ বৃদ্ধ কর্তৃক যৌন নিপীড়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত বৃদ্ধের নাম মিরাজ উদ্দিন খান (৬৫)। সে ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ আমবাড়িয়ার আব্দুল লতিফ পাঠান বাড়ির আব্দুল লতিফের ছেলে। শিশুকে জোর পূর্বক যৌন নিপিড়নের ঘটনায় সমাজ পতিরা ৩০ হাজার টাকায় জরিমানা করে নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন। শিশুর পরিবারকে পুলিশ ও সাংবাদিকের কাছে মুখ খুলতে বারন করেছেন, অন্যথায় সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন ওয়ার্ড মেম্বার।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মিরাজ উদ্দিন খানের মুদির দোকানের ভেতরের কক্ষে কন্যা শিশুকে যৌন নিপীড়নের পর রাত ৯টায় স্থানিয় একটি ক্লাব কক্ষে শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি ধামা পাচা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

নির্যাতিতার পরিবারের দেয়া বক্তব্যে জানা যায়, শনিবার দুপুরে মাদ্রাসার বিরতির সময় কলম কিনতে মুদি দোকানদার মিরাজ খানের দোকানে গেলে মিরাজ খান শিশু শিক্ষার্থীকে জোর পূর্বক তার দোকানের ভেতরের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে শিশুর জামা কাপড় খুলে স্পর্শকার স্থানে পাশবিক আচরণ করে। শিশু শিক্ষার্থী বাড়িতে গেলে তাকে গোসল করানোর সময় যৌন নীপিড়নের বিষয়টি তার মায়ের নজরে আসে। জিজ্ঞাসা বাদে শিশুটি তার মায়ের কাছে জানায়। ঘটনাটি শিক্ষার্থীর মা মাদ্রাসা শিক্ষকদের জানালে তারা স্থানিয় মেম্বার ও সমাজ পতিদের জানান। এতে সমাজ পতিরা রাতে একটি সামাজিক ক্লাবে বসে সালিশের আয়োজন করেন। সালিশে জেরার মুখে শিশুকে যৌন নিপীড়নের কথা স্বীকার করেন মেরাজ খান। এতে উপস্থিত সালিশান ৩০হাজার টাকা জরিমানা ও কান ধারান এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবেন না মর্মে একটি খালি ষ্টাম্পে স্বাক্ষর নেন। এছাড়া নির্যাতিত শিশুর পরিবার থেকেও সালিশ মেনে নেওয়ার স্বীকৃতি স্বরুপ জোর পূর্বক স্বাক্ষর আদায় করে। সালিশানের পক্ষ থেকে থানা পুুলিশে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয় পরিবারটিকে। এমনকি থানা পুলিশে গেলে সমাজ চ্যুত কারার ভয় দেখানো হয়। ভয়ে আতঙ্কে ও সমাজ চ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় আইনি সহতানিতে পারছেন না পরিবারটি।

যৌন নীপিড়নের স্বীকার শিশুর মা জানান, আমার স্বামী ও দেবর বিদেশে থাকে। আমরা শুধু মাত্র মহিলারা দেশে আছি। আমাদের কোন পুরুষ অভিবাবক নেই । তাই তারা যা করেছে তা মেনে নিতে হচ্ছে। ৩০হাজার টাকা জরিমানা করেছে সে গুলি নাকি সরকারী রাস্তা মেরামতের কাজে ব্যয় করবে। আমার টাকার প্রয়োজন নেই। আমার ও আমার মেয়ের নিরাপত্তা চাই। আর আমার মেয়ের সাথে যে খারাপ আচরণ করেছে তার বিচার চাই। এমন বিচার চাই যাতে অন্য কোন শিশুর সাথে এমনটা করতে যে কেউ ভয় পায়।

এব্যাপারে জানতে চইলে সালিশান ওয়ার্ড মেম্বার ইউসুফ হারুন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফা জানান, শালিশে সমাজের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সকলের সম্মতি ক্রমে উপযুক্ত বিচার করা হয়েছে তবে কোন জরিমানা বা মুচ লেখা নেয়া হয়নি।

কিন্তু সরজমিনে গিয়ে তাদের বক্তব্যের ভিন্নতা পওয়ায়। স্থানিয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্তকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া উভয় পক্ষ থেকে থেকে স্বাক্ষর নেয়া একটি ১শ টাকা মূল্যের নন জুড়িশিয়াল স্টাম্প পাওয়া যায়। শালিশে উপস্থিত ১৩ জনের স্বাক্ষরিত স্বাক্ষির ও একটি তালিকা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায় মূল শালিশান মেম্বার ইউসুফ হারুনের কোন স্বাক্ষর নেই। অভিযুক্ত মেরাজ উদ্দিন খানের ফোন নাম্বারে কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনুর জানান, শিশুর শরীরে যদি যৌন নীপিড়নের চিহ্ন থেকে থাকে তাহলে একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তো দুরে থাক চেয়ারম্যান হিসেবে আমিও সমাধান করতে পারিনা।

মিরসরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, ঘটনাটা যতো হালকা শুনেছিলাম এখন শুনছি বিষয়টা ততো হালকা নয়। ইউএনও মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে তদন্ত স্বাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইউএনও মিনহাজুর রহমান জানান, থানা পুলিশের সাথে আলোচনা করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *