রামোসের হ্যাটট্রিকে কোয়ার্টারে পর্তুগাল

তাঁর দুই চোখের ভেতরে যে নৈশব্দের শিকড় ছিল, বুঝে গিয়েছিল তা ‘সিআর সেভেন’ গায়ে জড়িয়ে আসা গ্যালারির হাজার হাজার রোনালদো! তাই যখনই রিজার্ভ বেঞ্চের মানুষটিকে বড়স্ট্ক্রিনে দেখিয়েছে, তখনই চিৎকার করে রোনালদোর পাশে থাকার চেষ্টা করেছে গ্যালারি। কিন্তু উদাস রোনালদো তখন সামনে দিব্যি দেখছিলেন- সামনেই তাঁর উত্তরসূরি। এসে গেছে গঞ্জালো রামোস। তাঁর হ্যাটট্রিকেই তখন উড়ছিল পর্তুগাল, তাঁর উত্থানেই পুরো স্টেডিয়ামে জয়জয়কার। বেঞ্চ থেকে তিনিও গিয়েছিলেন রামোসের কাঁধে হাত রাখতে। কিন্তু রোনালদোকে ছাড়াই পর্তুগিজদের জাহাজ তখন কোয়ার্টারের বন্দর দেখে নিয়েছে। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-১ গোলে যখন এগিয়ে গেছে, তখন রোনালদোকে ম্যাচের ৭৩ মিনিটে শুধু নোঙর ফেলার জন্য নামিয়েছিলেন কোচ সান্তোস। শ্রদ্ধাভরে অধিনায়কত্বের ব্যান্ডটি তাঁর হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন পেপে। পুরো গ্যালারির হর্ষোল্লাস বলে দিয়েছিল- শুধুই কি পর্তুগালের জয়! তাঁরা তো দেখতে এসেছেন তাঁদের প্রিয় তারকা রোনালদোকেই।

হারলে বিদায়, হারলে রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ- একটা কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেও গ্যালারিতে রোনালদোর ভক্তদের ঢল নেমেছিল। কিন্তু তার আগেই তাঁকে তাঁর টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়ে দেয়, প্রথম স্কোয়াডে থাকছেন না তিনি। আগের ম্যাচগুলোতে গোল মিস করার জন্য সমালোচিতও হচ্ছিলেন দেশে। এদিন ব্রুনো ফার্নান্দেজ, গঞ্জালো রামোস, জোয়াও ফিলিক্সকে নিয়ে দারুণ এক ট্রায়াঙ্গেল বানিয়েছিল পর্তুগাল। আর সেখান থেকেই ম্যাচের ১৭ মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের অ্যাঙ্গেল মেপে জোরালো শটে গোল করেন গঞ্জালো রামোস। পর্তুগিজ এক সাংবাদিক তথ্য বের করে ফেলেন, এই রামোস এর আগে দেশের হয়ে মাত্র ৩৫ মিনিট খেলেছিলেন। আর ১৭ মিনিটেই নকআউট ম্যাচে গোল করেছেন। সেখানে রোনালদোর নকআউট ম্যাচে নাকি ৫১৪ মিনিটেও কোনো গোল নেই! বোঝা যায়, বয়সের কারণেই রোনালদোকে যাঁরা ‘সিআর থার্টিসেভেন’ বলে, তাঁদেরই একজন হবেন ওই সাংবাদিক। অবশ্য পর্তুগালের দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন একজন ৩৯ বছর বয়সী। পেপে- কর্নার থেকে পাওয়া বল তাঁর হেডেই গোল হয়। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়সী ফুটবলারের গোলদাতার তালিকায় এখন তিনি দ্বিতীয়তে। ম্যাচের তৃতীয় আর রামোসের দ্বিতীয় গোলটি আসে ৫১ মিনিটে। ডালোতের একটি ক্রস থেকে গোল করেন তিনি। ৫৫ মিনিটে রাফায়েলের গোলে ৪-০ হয়ে যায় ম্যাচ। এরপর ম্যানুয়েল আকঞ্জির গোলে কিছুটা মুখ রক্ষা হয় সুইসদের।

কিন্তু তখনও যে অপেক্ষা এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকম্যানকে দেখার, তা কে জানত। ৬৭ মিনিটে দুর্দান্ত গোল করেন হ্যাটট্রিক রামোস। উত্তরসূরিকে তখন উঠিয়ে পূর্বসূরি রোনালদোকে নামায় পর্তুগাল। একটি ফ্রি কিক আর একটি অফসাইডে বাতিল গোল- ১৭ মিনিটে এটুকুই ছিল রোনালদো। তাঁকে ছাড়াও যে সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে হারানো যায়- সেই বিশ্বাসটা জোরালো করেই কোয়ার্টারে নামবে এই ‘নতুন পর্তুগাল।

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *