চট্টগ্রামে হাজারো গণহত্যার কালের স্বাক্ষীর উপর গড়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার অপচেষ্টা থমকে আছে। ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি) কতৃর্পক্ষ হাজারো শহীদের রক্তে মেশানো মাটির উপর গড়ে তুলেছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন(ইবা)। উল্লেখ্য, জিয়া ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (জিবা) এর নাম পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে বিএনপি সরকারের ক্ষমতার পর। এখনও অর্ধ নির্মিত অবস্থায় ফেলে রাখা হযেছে এই ইবা ভবন। অভিযোগ রয়েছে বধ্যভূমির দুই একর জায়গার দুই শতকও নেই বধ্যভূমির বাউন্ডারীতে। এদিকে, একটি প্রভাবশালী মহল বধ্যভূমির পশ্চিম অংশে একটি রাস্তা তৈরী করেছে গত রমজান মাসে।
চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ এ বধ্যভূমি ফয়স’ লেক সংলগ্ন কাঠাল বাগান বধ্যভূমি। জিয়া ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (জিবা) এর বহুতল ভবন বাস্তবায়ন করতে বিএনপি জামায়াত সরকারের আমলেই এ বধ্যভূমির জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। চট্টগ্রামে এমন ভূমি উদ্ধারে কোন সরকারী উদ্যোগ নেই। সেইসঙ্গে রয়েছে জেলা প্রশাসনসহ পুলিশ প্রশাসনের আর্থিক ও দেশবিরোধী দূর্বলতা।
পাকিদের হত্যাযজ্ঞের করুণ কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে ঐ সময়কার প্রত্যক্ষদশীর্ একেএম আফসার উদ্দিন ‘উন্মেষ’ নামক একটি ছোট্ট সংকলনে বলেছেন স্মৃতির কথা। ছোট্ট এ সংকলনটি মোঃ শহীদুল ইসলাম সম্পাদিত ও পাহাড়তলী শাখা থেকে সূর্যমুখী কাফেলা কর্তৃক নিবেদিত এ উন্মেষ প্রবন্ধটি। আফসার উদ্দিন তার লেখায় তুলে ধরেছেন—একাত্তর সালের ১০ নবেম্বর সেদিন ছিল ২০ রমজান। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে ফজরের নামাজের পর আকবর শাহ মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হতেই পাক হানাদাররা ঐ মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনসহ বেশ কয়েক মুসল্লীকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নিজেকে আড়াল করে আরও ৪ জনসহ ফয়স সংলগ্ন কাঠাল বাগানের বধ্যভূমির কাছে গিয়েছিলেন। হত্যাযজ্ঞের নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে তার লেখায়। ঐ দিন পাক হানাদাররা শুধু মসজিদ থেকেই নয়, বাসা বাড়ি থেকে ঘুমন্ত তরুণ যুবকদের টেনে হ্যাচড়ে যেমন নিয়ে যায় জল্লাদখানায় তেমনি পাহাড়তলী স্টেশনে আসা ট্রেন থেকে অনেক যাত্রীদের নিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। ফলে জল্লাদখানার পাশ্ববতীর্ সরু খালটির পানি রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
কয়েক শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বৃহৎ বধ্যভূমি হচ্ছে পাহাড়তলীর ফয়স লেক সংলগ্ন কাঠাল বাগান বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালের ১০ নবেম্বর এ বধ্যভূমিতে পাক পশুদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে এলাকাবাসি হারিয়েছে ময়না, মানিক, সফিসহ শত শত তরুণ, যুবক ও প্রবীণদের। আজও মাটি খুড়লে পাওয়া যাবে শহীদদের মাথার খুলি আর হাড়গোড়। নিরবে কেঁদে যাচ্ছে এসব আত্মত্যাগী প্রাণ। বিধস্ত বাংলার ৩০ লাখ শহীদের মাঝে দেশব্যাপী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের পাশে দ্বীপশিখা হয়ে জ্বলবে এ এলাকার যুদ্ধাহত শহীদরাও। কিন্তু ভূমিদস্যুদের থাবার কারণে ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে এ বিশাল বধ্যভূমি। প্রায় ২ একর জায়গার বধ্যভূমি শোষকদের দখলে চলে গেছে বেশিরভাগই। সামান্য একটু জায়গায় প্রজন্ম ৭১ এর অনুপ্রেরণায় সরকারি উদ্যোগে এ বধ্যভূমিতে ছোট্ট একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। কিন্তু বৃহদায়তন অট্টালিকার কারণে আড়ালে পড়ে যাচ্ছে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত তৃতীয় প্রজন্মের জন্য গড়ে তোলা স্মৃতিস্তম্ভ। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে সেই সুবিশাল খালটি। যে খালের মধ্যে পাকিরা বাঙালিদের হত্যার পর ঐ খালের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিল।
এদিকে, ৯০-এর দশকে এসে ঐ এলাকার যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তানীদের আবাসস্থল পাঞ্জাবী লেনের নাম মুছে দিয়ে শহীদ লেন নামকরণ করা হলেও শহীদদের স্মৃতিফলক গড়ে তোলা পুলিশ বিট সংলগ্ন শহীদ মিনার থেকে নামফলক উপড়ে ফেলেছে একটি চক্র। শহীদ মিনার হেসেবে গড়ে তোলা স্তম্ভগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেও সেখানে প্রতিরাতেই জমে উঠে মাদকসেবীদের জমজমাট আড্ডা। সংরক্ষণের কোন পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের। ফলে শহীদদের স্মৃতি ধূলিসাৎ হচ্ছে প্রতি কদমে কদমে।
২৪ঘণ্টা/জেআর
Leave a Reply