আবু ছুরায় (মাল্টা) ভাগ্য বদলের স্বপ্ন বুনছেন আবছার

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বিশ্বপরিচিত সুস্বাদু রসালো ফল আবু ছুরা (মাল্টা) চাষ করে নিজ ভাগ্য বদলের স্বপ্ন বুনে যাচ্ছেন সৌখিন মৌসুমি ফল চাষী আবছার উদ্দিন (৩৫)। আগামীর সম্ভাবনার স্বপ্ন নিয়ে নিজ মনের আশাকে পুজি করে স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এ তরুণ উদ্যোগতা। আগামী ১০ বছর সময়কে টার্গেট করে নিজে সফল হওয়ার আশায় ও এলাকার বেকার শ্রমজীবীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তার এ পথ চলা। দেশে ও বিদেশে এ ফলের রয়েছে প্রচুর চাহিদা ও দাম। তাই প্রচুর লাভের সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি।

উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাইরতলি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে আবছার উদ্দিন। পেশায় তিনি একজন ইট, বালু, কংকর ও মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী। তিনি প্রায় সময় এলাকার লোকজনের জীবনমান উন্নয়নে সর্বদা নিজেকে নিয়োগ রাখেন। সবসময় তিনি এলাকায় নতুন কোন চমক দেখাতে পছন্দ করেন।

তার সাথে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ তার মনে হল দেশে ও বিদেশে পাকিস্তানি মাল্টা আবু ছুরার খুবই চাহিদা এবং দামও বেশি। এ ফল এলাকায় চাষ করলে কেমন হয়। এ মানসিকতা থেকে বিগত ৪ বছর আগে সম্পূর্ণ নিজ অভিজ্ঞায় নিজ বাড়ির পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায় ৪ একর জমিতে গড়ে তুলেন আবু ছুরার চাষ। শুধু তাই নয় এ বাগানে রয়েছে লেবু, কমলা, আতা, পেঁপে, জাম্বুরা, আমলকি, লিচু, ফজলি, আম্রপালি, রুপালী আম, টক লেবু, পেঁপে বাগান। আরো রয়েছে শাক ও সবজির বাগান। তাছাড়া রয়েছে তেজপাতা, আদা, হলুদ ও বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি মরিচ ও পুদিনা পাতার বাগান। এ বাগানের পাশেই সমতল ভূমিতে রয়েছে বিশাল পেঁপে বাগান।

আবু ছুরায় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন বুনছেন আবছার

সরেজমিন গতকাল ১৪ ডিসেম্বর (বুধবার) সকালে উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মঙ্গলচাদ পাড়ার পশ্চিমের পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় আবছার উদ্দিনের বিশাল আবু ছুরা (মাল্টা) বাগান। প্রায় ৪ একর জায়গায় সারি সারি করে লাগানো হয়েছে গাছগুলো। বাগানের সব গাছে ইতোমধ্যে যে পরিমাণ ফলন এসেছে তা সকলের নজর কাড়ছে। পুরো বাগানে রয়েছে লেবু, কমলা, আতা, পেঁপে, জাম্বুরা, আমলকি, লিচু, ফজলি, আম্রপালি, রুপালী আম, টক লেবু, পেঁপে বাগান। আরো রয়েছে শাক ও সবজির বাগান। তাছাড়া রয়েছে তেজপাতা, আদা, হলুদ ও বিভিন্ন জাতের মরিচ বাগান।

বাগান মালিক আবছার জানান, তার মাল্টা বাগানে ৩ জাতের মাল্টা গাছ আছে। গাছগুলোর বয়স কারো ২, কারো ৩, কারো ৫ বছর হবে। বেশিরভাগ গাছে যথেষ্ঠ ফলন আসছে।

তিনি আরো জানান, বাগানের সম্পূর্ণ গাছে পরিপূর্ণ ফলন পেতে ৭ থেকে ৮ বছর সময় লাগবে। এবারের আবু ছুরাগুলো সম্পূর্ণর্ পাকতে আরো এক মাস সময় লাগবে। বাজারে আবু ছুরার কেজি প্রতি বাজারদর ২’শ ৪০ টাকা। আর বিদেশে চালান দিতে পারলে প্রতি কেজির দাম পাবো ৪’শ টাকা। ১০ টাকা দরে তেজপাতা গাছ লাগিয়ে এখন বস্তায় বস্তায় তেজপাতা বিক্রি করছি। সবদিক বিবেচনা করে সামনে এগোতে পারলে ভাগ্যবদল হবে ইনশাআল্লাহ। এ বাগান নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। এ পর্যন্ত বাগানটি করতে তাহার ৪—৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাগানের কিনারা ঘেষে মৌসুমী সবজি চাষ করে পেয়েছেন অর্ধলক্ষাধিক টাকা। লেবু বিক্রয় করেন প্রতি বছরে ১৫ হাজার টাকার উপরে। পেঁপে বিক্রিতো আছে সারা বছর।

উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফজল করিম, মহি উদ্দীন, মোহাম্মদ জাকারিয়া, যুবলীগ সভাপতি মো, আবদুল হালিম জানান, নতুন ধারার মাল্টাচাষী আবছার এলাকায় সবসময় ভিন্ন কিছু করে চমক সৃষ্টি করেন। এলাকায় তিনিই প্রথম আবু ছুরা চাষ করেছেন।

উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস এম জহির জানান, মাল্টা চাষী আবছার একজন কর্মবীর মানুষ। তাহার মাল্টা বাগান দেখতে কয়েকবার ওই এলাকায় গিয়েছি। ভালো ফলনের তাকে সাধ্যমত সহযোগীতা করেছি।

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, মাল্টা চাষী আবছারের বাগান আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনা উৎপাদন প্রকল্পের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগীতাও করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মাল্টাচাষী আবছার সফল হবেই।

২৪ঘণ্টা/জেআর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *