কক্সবাজারের সর্বদক্ষিণে প্রজাপতির দ্বীপখ্যাত সোনাদিয়ায় মৌসুমের শুরুতে পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে পর্যটন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। একইসঙ্গে জীবিকা হারানোরও শঙ্কায় রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া বিভিন্ন উদ্যোক্তার লাখ লাখ টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা তো আছেই। এ নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘমেয়াদি হলে কর্মসংস্থান হারাবে পর্যটন খাতে নিয়োজিত শত মানুষ। তাই পর্যটনবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর অর্থ সম্পাদক নুরুল আলম রনি।
কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে ২৪ কিলোমিটার এবং জলপথে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত সোনাদিয়াতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। পরিবেশবান্ধব ট্যুরিজম পার্কটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ দ্বীপে দৃশ্যমান রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ। সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্কের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে এই বিদ্যমান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরিবর্তিত রেখে পর্যটক আকর্ষণের বিভিন্ন উপাদান যুক্ত করা হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা স্থানীয় থানা পুলিশ কতৃক ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা তুলে বিকাশমান এ পর্যটন কেন্দ্র চালু রাখার আবেদন জানিয়ে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি লিখিত পত্র দিয়েছেন সোনাদিয়ার স্থানীয় বাসিন্দারা। এ লিখিত পত্রে সম্মতি দিয়ে কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এড. শেখ কামাল বলেছেন, পর্যটন খাতকে আরো গতিশীল ও বিকশিত করতে উক্ত আবেদন সদয় বিবেচনা করতে সুপারিশ করা হলো। ঐ লিখিত পত্রে স্থানীয়রা বলেছেন, সম্প্রতি প্রজাপতি দ্বীপখ্যাত সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রী যাপনের নিষেধাজ্ঞা জারি করায় হঠাৎ মৌসুমের শুরুতে পর্যটক শূন্য হয়েছে পড়েছে এলাকা, অসহায় হয়ে পড়ে সোনাদিয়ার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প নির্ভর অসহায় জনগণ। সদাসয় সরকারের যে কোন প্রকল্পে সোনাদিয়াবাসী সহযোগীতায় বন্ধ পরিকর। কিন্তু জীবন জীবিকার তাগিদে অসহায় সোনাদিয়াবাসীর প্রাণের দারী সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রীযাপনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারপূর্বক পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হোক।
এদিকে সোনাদিয়ায় রাতে পর্যটকদের অবস্থান নিষিদ্ধ হলে এ সম্ভবনাময় পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের কথায়, এই প্রবাল দ্বীপে বেড়ানোর উদ্দেশে অনেক পর্যটক তিন দিন অথবা এক সপ্তাহের জন্য কক্সবাজার থেকে আসেন। সোনাদিয়ায় রাতে থাকতে না পারলে সোনাদিয়াবিমুখ হয়ে যাবে ভ্রমণকারীরা। তাই সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নয় বরং কিছু বিধিনিষেধ বেধে দিতে পারে সরকার। এজন্য এ দ্বীপে পর্যটকদের যাওয়ার আগে অনলাইনে নিবন্ধন করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। নির্ধারিত ফি দিয়ে নিবন্ধন করে যেতে হবে পর্যটকদের। সরকার চাইলে ওই অর্থ ব্যয় করতে পারে দ্বীপটির উন্নয়নে, এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয় অনেক বাসিন্দা।
বিষয়টি নিয়ে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর অর্থ সম্পাদক নুরুল আলম রনি জানান, যেসব কারণ দেখিয়ে এ সম্ভবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হলো -পরিবেশ বিপর্যয় আর অপরাধ কর্মকাণ্ড। প্রথমত এখন অব্দি সোনাদিয়ায় পর্যটক কতৃক কোনো অপরাধ কাণ্ড ঘটেছে বলে আমরা শুনিনি। নিতান্তই যদি ছোটখাটো কিছু অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে স্থানীয় পুলিশ সোনাদিয়ায় একটি স্থায়ী বা অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু পুরো পর্যটন খাতকেই তো হুমকির মুখে ফেলতে পারেন না।
অতঃএব পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করবেন বলে আশা করছি।
২৪ঘণ্টা.জেআর
Leave a Reply