জোরারগঞ্জে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে চাঁদাবাজের কারণে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন ধরনের প্রতিকার পাচ্ছে না ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ এমন অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত গত ১ জানুয়ারি চাঁদাবাজরা ৬ ব্যবসায়ীকে গুলিবিদ্ধ করেও ক্ষান্ত হয়নি। মোবাইলে আবারও প্রাণ নাশের হুমকী দিচ্ছে মেলা কমিটির সদস্যদের। কিন্তু জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী করছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে এখনো কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। অথচ থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মাঈন উদ্দিন টিটু অনেকটা স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ অস্ত্রধারী এ সন্ত্রাসীর অস্ত্রের যোগানদাতার তথ্য জেনেও কোন ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের মীরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ইফতেখার হাসান সময়ের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধিকে বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলার প্রেক্ষিতে র‌্যাব এজাহার নামীয় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার সময় একটি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। অস্ত্রের যোগানদাতা কে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে তদন্তকারী কর্মকতার্। রিমান্ডে আনা গেলেই অস্ত্রের যোগানদাতার তথ্য পাওয়া যাবে।

জোরারগঞ্জ বিজয় মেলা কমিটির পক্ষ থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২২ থেকে ৩১ ডিসেম¦র পর্যন্ত ১০ দিন ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে প্রতিবছরের মতোই বিজয় মেলায় আগত বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসেন । এসব দোকানে বিভিন্ন সময় স্থানীয় অস্ত্রধারী চাঁদাবাজ মাঈন উদ্দিন প্রকাশ টিটু(৪২) চাঁদা দাবী করে আসছিল। এসময় টিুটুর সাঙ্গপারাও মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করায় বিজয় মেলা পরিষদ দোকানদারদের চাঁদা দিতে নিষেধ করে। এতে ক্ষিপ্ত চাঁদাবাজ মাঈন উদ্দিন বিভিন্ন সময় সাঙ্গপাঙ্গসহ মেলায় এসে আয়োজক কমিটির সদস্যদেরকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি ভোর সোয়া ৪ টার দিকে মেলার শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা মেলা শেষ করে বাড়ী ফিরছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে জোরারগঞ্জ বাজারে পৌছালে মাঈন উদ্দিনের লোকজন মেলা কমিটির সদস্যদের গতিরোধ করে। টিটুর নেতৃতে¦ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে।

এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মেলার শৃংঙ্খলা কমিটির সদস্য কাউছার আহম্মদ, ইমতিয়াজ উদ্দিন(২০), মিরাজ আকবর শাকিব(১৯), সাইফুদ্দিন রিফাত(১৮), তারেক হাসান (২৫) এবং সরোয়ার হোসেন(১৮) গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও সন্ত্রাসীরা জোরারগঞ্জ স্কুল মাঠে মেলা কমিটির আরও কয়েকজন সদস্যকে রামদা, কিরিচ, হকিষ্টিক ইত্যাদি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করায় গুরুতর আহত হয়। এসময় সন্ত্রাসীরা কমিটির সদস্যদের ব্যবহৃত কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুুর করে। আহতদের চিৎকারে মেলায় উপস্থিত লোকজন এগিয়ে আসেন। এসময় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি করতে করতে চলে যায়।

স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় মেলার শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য কাউছার আহাম্মদ প্রকাশ আরিফ গত ৪ জানুয়ারি জোরারগঞ্জ থানায় ১৭ জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং ৩/৩, তারিখ—০৪/০১/২০২৩)।

র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, মামলার পর থেকে এজাহারনামীয় আসামীরা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও অপরাধীদের ধরতে পারেনি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জেনেছে মামলার এজাহারনামীয় প্রধান ৪ আসামী কুমিল্লা জেলার চান্দিনা এলাকায় অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭ এবং র‌্যাব-১১ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গত ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টায় সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। এমসয় মামলার এজাহারনামীয় ২, ৫, ৬ ও ৯ নং আসামীকে আটক করে টিমটি। এরা হল জোরারগঞ্জ মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার মোস্তফা মাস্টারের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (২২), মনির আহমদের ছেলে মাঈন উদ্দিন (২৫), কামাল হোসেন প্রকাশ আর্মি কামালের ছেলে মো. জুয়েল (৩০), এবং মৃত মহিউদ্দিনের ছেলে জামাল উদ্দিন (২৫) আটক করে জোরারগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা স্বীকার করে তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং এজাহার নামীয় আসামী।

২৪ঘণ্টা.জেআর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *