মোবাইলে লুডু খেলার জেরে হত্যা

আকস্মিকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নিমিষেই হত্যার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে পুরো পরিবার। অবশেষে হত্যা মামলার আসামী হয়ে ফেরারী হতে হচ্ছে। এমন ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ভোটের সময় দ্বারে দ্বারে গেলেও এলাকার সমস্যা মেটাতে নারাজ। আরো অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্যরা এখন আর টাকা ছাড়া ঝগড়া বিবাদ মেটাতে নারাজ। ইন্টারনেটের এ যুগে ভাল শিক্ষা রেখে খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে কিশোর আর তরুণরা। মেধাকে ভাল কাজে না লাগিয়ে অনলাইনে জুয়ার মাধ্যমে আয়ের চেষ্টা মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। সামাজিকভাবে সমাধা করা যায় এমন বিষয়গুলো গড়াচ্ছে হত্যা পর্যন্ত। গত বছরের ২৮ আগস্ট হোসাইন ও হানিফ মোবাইলে লুডু খেলায় মত্ত ছিল দুই বন্ধু। কিন্তু মেবাইলে লুডু খেলাকে কেন্দ্র করে এক পযার্য়ে তুমুল ঝগড়ায় মেতে উঠে। ঝগড়া থামাতে গিয়ে জড়িয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। হোসাইনের বাবা মোহাম্মদ মালেক এগিয়ে এলে হানিফের মা ও অন্যান্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে শুরু করে ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার। ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হোসাইনের বাবা মোহাম্মদ মালেক। স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদ মালেককে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মালেক(৪৬) কে মৃত ঘোষণা করেন।

কক্সবাজারের পেকুয়া থানার মামলা এজাহার থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২৮ আগস্ট রাত ৯ টার দিকে মোহাম্মদ মালেকের ছেলে মো. হোসাইন (১৯) এর সাথে তাদের প্রতিবেশী নুরুল আমিনের ছেলে হানিফের অনলাইনে লুডু খেলা নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়। ঝগড়ার জের ধরে রাত ১০ টার দিকে নুরুল আমিন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মো. হোসাইনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। হোসাইনের বাবা মালেক তার ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এসময় নুরুল আমিন তার হাতে থাকা হাতুড়ি দিয়ে মালেকের বুকে ও পিঠে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। ছেলে হানিফ মিয়াও মালেকের বুকে ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এসময় নুরুল আমিনের স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও মালেককে ছুরি ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এক পর্যায়ে মালেক মরে গেছে ভেবে আক্রমনকারীরা পালিয়ে যায়। মালেকের আর্ত চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন আসে। ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত মালেককে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলার স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন এ ঘটনায় নিহত মালেকের স্ত্রী বাদী হয়ে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানায় ৮ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন(মামলা নং—১৮, তারিখ ২৯/০৮/২০২২)।

র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব সদস্যরা। এ লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা ও ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে মামলার এজাহারনামীয় অন্যতম প্রধান আসামী ইয়াসমিনের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে র‌্যাব সেভেনের সদস্যরা। চট্টগ্রামের মিরসরাইস্থ মিঠাছড়া এলাকায় একটি ফ্লাট বাড়িতে অভিযান শুরু করে টিমটি। গত ১১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১ টার দিকে কক্সবাজারের পেকুয়া থানাধীন বাজারপাগা গ্রামের নুরুল আমিনের স্ত্রী ইয়াসমিনকে (৪০)আটক করে র‌্যাব সেভেনের দফতরে নিয়ে আসে। ইয়াসমিনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে মিরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজ এলাকা থেকে মালেক হত্যা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামী ইয়াসমিনের ছেলে হানিফ মিয়াকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় আসামী বলে স¦ীকার করে। তাদেরকে পেকুয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

২৪ঘণ্টা.জেআর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *