চট্টগ্রাম সিটি কপোর্রেশনে চলছে টেন্ডার নিয়ে ত্রিমুখী কোন্দল। তিন আওয়ামী লীগ নেতার আদর্শে গড়া ঠিকাদাররাই মূলত কপোর্রেশনের বিভিন্ন কাজের টেন্ডার নিয়ে যুগপোযোগী ভাগবাটোয়ারা করে আসছিল। মেয়রের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঠিকাদাররাও বাগিয়ে নিতে চায় সুবিধাজনক ও লাভজনক টেন্ডারগুলো। সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে বিএনপি ঘরণার মেয়র ও সাবেক তিন তিন বার নিবার্চিত মেয়রের অনুসারীরা।
চসিকের বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার পক্রিয়ার অনৈতিক শর্ত ও নীতিমালা নিয়ে পরিচালক ড.ইয়াজদানীর কক্ষে রবিবার ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। যদিও চসিক মামলার এজাহারে তা এড়িয়ে গেছে। পুলিশ এজাহারনামীয় তিনজনসহ মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করলেও এজাহারের বাহিরে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। রবিবার কপোর্রেশনের অস্থায়ী কার্য্যালয়ের ৪র্থ তলায় এমন ঘটনার মূলে রয়েছে সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো। টেন্ডার বাণিজ্যে আসক্ত হয়ে লটারীর মাধ্যমে টেন্ডার বিলি ও বন্টন করায় এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে। সরকার ইলেকট্রনিক গর্ভনমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ইজিপি) বা ই-টেন্ডার চালু রাখলেও চসিকের অসাধু কর্মকতার্ এবং মেয়রপক্ষীয়রা তা মানছেনা। ফলে ঠিকাদারদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। রবিবার বিকেলে স্বজনপ্রীতির টেন্ডার ওপেনিংয়ের পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে ঠিকাদাররা। এসময় বিক্ষুব্ধরা ভাংচুর, পিডিকে মারধর করে প্রকল্প পরিচালকের উপর ক্ষোভ ঝেরেছে প্রকল্প দফতরের সামনে টাঙ্গানো নামফলক ও পিডি’র কক্ষ ভাংচুরের মাধ্যমে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ণ প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন ড. গোলাম ইয়াজদানী। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতরের নিবার্হী প্রকৌশলী হিসেবে তিনি চসিকের অস্থায়ী কার্য্যালয়ের ৪র্থ তলার ৪১০ নং কক্ষে কর্মরত ছিলেন রবিবার। এসময় বিক্ষুব্ধ ঠিকাদারদের হামলার শিকার হয়ে শারিরীক ও মানুষিকভাবে আহত হন। এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট সিটি কপোর্রেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ে বেশকয়েক ঠিকাদারের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়েছিল এ প্রকৌশলীর। রবিবার ২৫টি টেন্ডারের মধ্যে ১২টি ইজিপি সিস্টেমে ও ১৩টি লাটারির মাধ্যমে কার্যকর করায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন ড. ইয়াজদানী।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সময়ের কাগজকে বলেন, সিটি কপোর্রেশনের প্রকল্প পরিচালককে মারধর ও কক্ষ ভাংচুরের ঘটনায় চার ঠিকাদারকে গ্রেফতার কেও আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে।
এমন অভিযোগে হামলার ঘটনায় অংশ নেয় ক্ষুব্দ ঠিকাদারদের একটি অংশ। ফলে কর্পোরেশনের নিরাপত্তা কর্মকতার্ দিয়ে দায়সারা গোছের মামলা দেওয়া হয়েছে খুলশী থানায়। মামলার এজাহারে ১১ জনের নাম উল্লে্যখ করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে পুলিশ এজাহার নামীয় ৩জন ও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিযোগবিহীন এক জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে।
নগরের টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় ভবনের চার তলায় প্রকল্প পরিচালকের কক্ষে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় মোট ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫/১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে খুলশী থানা পুলিশ। রবিবার রাতে খুলশী থানায় চসিকের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. গোলাম ইয়াজদানীর ৪১০ নম্বর কক্ষে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন নাজমুল হাসান ফিরোজ,সঞ্জয় ভৌমিক প্রকাশ কঙ্কন, সুভাষ মজুমদার ও মাহমুদ উল্লাহ।
চসিকের মামলায় অভিযুক্তরা হলেন মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজের মালিক ফিরোজ, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সুভাষ, এস.জে. ট্রেডার্সের মালিক সাহাব উদ্দিন, নাজিম এন্ড ব্রাদার্সের নাজিম মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস,, শাহ আমানত ট্রেডার্সের কঙ্কন, মেসার্স খান করপোরেশনের হাবিব উল্ল্যাহ খান, ইফতেখার এন্ড ট্রেডার্সের ইউসুফ ও জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিষ বাবু এবং অজ্ঞাত ঠিকানার ফরহাদ।
২৪ঘণ্টা.জেআর