শীতে শরীরের যত্ন ও হালকা সাজ

শীতের কথা মনে পড়লেই অনুভূত হয় বাতাসের হিমশীতলতা, ঘ্রানেন্দ্রিয় পায় পিঠাপুলির ঘ্রাণ। মনে পড়ে লেপ-কম্বল মুরি দিয়ে গুটিসুটি করে ঘুমানো। শীতের এই সময়টাতে ত্বক খুবই রুক্ষ, শুষ্ক ও মলিন হতে দেখা যায়। বাইরের ধুলাবালি, শীতল আবহাওয়া ও আর্দ্র পরিবেশের কারণে নারী-পুরুষ উভয়ের ত্বকের ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরণের সমস্যা যেমন ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া,ত্বক ও হাত-পা ফেটে যাওয়া, ত্বকে চুলকানি ইত্যাদি দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের চেহারায় খসখসে ভাব চলে আসে ও চেহারার লাবণ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই শীতের এই সময়টাতে ত্বকের সুস্বাস্হ্য রক্ষায় এবং ত্বককে সজীব ও মসৃণ রাখতে দরকার একটু বাড়তি যত্ন ও সর্তকতা।

শীতে ত্বক এবং চুলের সমস্যার সমাধানে কী করবেন?

কী কী সমস্যা হয়?

১. ইকথায়োসিস (হাঁটু থেকে পা পর্যন্ত এমনকি সর্বাঙ্গ শুকিয়ে খোসার মতো আঁশ উঠতে থাকে) সারা বছর থাকলেও এর প্রকোপ বাড়ে শুষ্ক শীতকালেই।
২. সেনাইল জেরোটিক প্রুরাইটাস (সারা গা শুকিয়ে চুলকানির তৈরি হয়)। চল্লিশোর্ধ্বদেরই এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।
৩. সোরাইসিস বা সোরিওসিস-এর সমস্যা (এই রোগে মাথা, হাঁটু, কনুই-সহ সারা শরীরে মাছের আঁশের মতো খোসা ওঠতে থাকে)।
৪. যে সব শিশুদের অ্যাটোপিক ডার্মাটাইসিস (এগজিমা) রয়েছে, তাদের এই রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে শীতে।
৫. এ ছাড়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, উলের পোশাক অর্থাৎ সোয়েটার, মাফলার, টুপি ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জির সমস্যা হয়। আসলে সিনথেটিক উল সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে এসে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে।
৬. খুশকির সমস্যা। শীতকালে নিয়মিত স্নান না করায় মৃত কোষ এবং ধূলিকণা জমে যায় চুলের গোড়ায়। এর থেকে খুশকির সমস্যা বেড়ে গিয়ে অত্যধিক পরিমানে চুল উঠতে থাকে।

সমাধান:

১. শীতকালে যাঁরা বিশেষ সমস্যায় ভোগেন, শীতের গোড়াতেই তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
২. প্রথমেই খেয়াল রাখুন যাতে সবসময় আপনার ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে। গোসলের আগে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মাখুন। তবে সরিষা তেল একেবারেই ব্যবহার করবেন না। কারণ, বিশুদ্ধ না হওয়ার ফলে ত্বকের সমস্যা বাড়তে পারে।
৩. শীতকালে গোসলের সময় সাবান ব্যবহার না করাই ভাল। এ ক্ষেত্রে সিনথেটিক ডিটার্জেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের সাবানে চামড়ার ওপর থেকে তেলের স্তর ওঠে যাওয়ার সম্ভবনা নেই। শীতকালে জীবানুনাশক সাবান একেবারেই ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতির পরিমান বেড়ে যায়।

৪. গোসলের পরে এবং রাতে ঘুমানোর সময় অন্তত দু’বার ময়েশ্চরাইজার মাখুন।
৫. ঠোঁট ফাটার সমস্যায় ভেসলিন ব্যবহার করুন।
৬. প্রচুর পরিমানে পানি খাবেন, এর ফলে শরীরের আদ্রতা বজায় থাকবে।
৭. সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। সপ্তাহে অন্তত তিনবার শ্যাম্পু করুন। প্রতিদিন গোসল করুন। এ ক্ষেত্রে মাথায় সরিষার তেল না দেওয়াই ভাল।
৮. ছোটদের তেল মালিশ করা যেতেই পারে। তবে সরিষাার তেল মাখিয়ে রোদে ফেলে রাখার যে রীতি প্রচলিত রয়েছে, তা ত্যাগ করুন আজই।
৯. সুতির পোশাক ব্যবহার করুন, উলের পোশাক সরাসরি না ব্যবহার করাই ভাল। হালকা সুতির জামার ওপর উলের পোশাক ব্যবহার করা উচিত।
১০. ফল, ভিটামিন সমৃদ্ধ শাকসবজি খান।

মডেল:শর্মী ইসলাম

প্রাকৃতিক উপায়ে শীতকালীন ত্বকের যত্ন:
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এক টেবিল চামচ মসুরের ডাল বাটা ও এক টেবিল চামচ কাঁচা দুধ বা সর ব্যতীত দুধের সঙ্গে আধা টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ ফলের রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগাতে পারেন। বেছে নিতে পারেন সাইট্রিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ ফল (টক ফল), যেমন—কাগজিলেবু, বাতাবিলেবু, কমলালেবু ইত্যাদি।

আবার ব্যবহার করতে পারেন পাকা পেঁপে, যা মুখের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। তৈলাক্ত ত্বকে শশার রস চমৎকার কাজে দিবে। শশার রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি ও চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে প্রয়োগ করুন। এতে তেলতেলে ভাব কমবে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও ফিরে আসবে।

শুষ্ক ত্বকের জন্য একটু ভিন্ন ফর্মুলা। মসুর ডাল বাটার সঙ্গে মধু নিন এক টেবিল চামচ। আর ফলের রস নিতে হবে আধা টেবিল চামচ। সঙ্গে যোগ করুন একটু দুধের সর আর চারটি আমন্ড বাদাম বাটা। প্যাকটি তুলে ফেলার পর কোল্ড ক্রিম বা বেশি ময়েশ্চারযুক্ত কোনো ক্রিম লাগাবেন। কলা পেস্ট করে লাগালে শুষ্ক ত্বকে প্রাণবন্ত ভাব ফিরে আসবে। মধুও শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব উপকারী। টমেটোর রসের সঙ্গে একটু মধু পেস্ট করে নিন। অনেক ভালো ফল পাবেন।

স্বাভাবিক ত্বকের জন্যও এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তবে লেবুর রস বাদ দিতে হবে আর মধুর পরিমাণ হবে এক টেবিল চামচ। স্বাভাবিক ত্বকে নারকেল তেল খুবই কার্যকরি। সুতির রুমাল গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো মতো নিংড়ে নিন। মুখের ওপর দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণের জন্য। মুখটা মুছে নিয়ে এবার গোলাপ জল লাগিয়ে নিন। যেকোন ত্বকেই এটি ব্যবহার করতে পারেন।

মডেল:শর্মী ইসলাম

শীতের পোশাক
যারা হালকা শীতের ফ্যাশান নিয়ে বেশ কনফিউশড, তাদের জন্য এটা কিন্তু ফ্যাশানের একদম সঠিক সময়। গরমের তীব্রতায় মেকআপ গলে যাবার চান্স নেই। আবার চুলও টেনে ওপরে বাঁধার দরকার নেই। সবচেয়ে ফ্যাশানেবল পোশাক গুলো, যেগুলো গরমে পরতে অস্বস্তি হচ্ছিল, সেগুলো অনায়াসে পরা যায়।
হালকা শীতে মেয়েদের পোশাক
অনেকেই নিত্য কাজে টি-শার্ট পর। হালকা শীতের জন্য কিনে নাও ফুলহাতা টিশার্ট আর জিন্স। আর এর ওপরে পড়ে নাও হুডি। হালকা শীতের জন্য একদম পারফেক্ট। এখন নানারকম স্টাইলিশ হুডিও বাজারে এসে গেছে। এছাড়াও হালকা জ্যাকেট বা পাতলা উলের কুর্তিও বেশ স্টাইলিশ। আর শুরুর শীতের ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে বাঁচতে কিনে নাও স্কার্ফ। এখন প্রচুর স্টাইলিশ স্কার্ফ পাওয়া যায়। গলায় জড়িয়ে নিলে স্টাইলটাই বদলে যায়। এছাড়াও নানারকম ফ্যাশানেবল টুপিও পাওয়া যায় এই মৌসুমে।

মডেল:শর্মী ইসলাম

চুলের সাজ
পোশাক তো হল। কিন্তু চুল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করব না, তা কি হয়! শীতে মনের মত হেয়ার কাট করে নাও। ব্যাঙ্গস কাটিং করিয়ে নিতে পার সামনেটা। এতে বয়সটাও কম দেখাবে। আর খুব স্টাইলিশ। আর পিছনটা ইচ্ছা মত লেয়ার, ইউ। আবার সামনে ব্যাঙ্গস কাট করলে পেছনটা কিছু না করলেও হয়। এমনিই স্টাইলিশ লাগে। আর বাঁধতে চাইলে করে নাও পনিটেইল বা ফিশটেইল বিনুনি। চুলকে এলোমেলো করে নাও। তারপর এই এলোমেলো চুলের টপনট খোঁপা। দারুন লাগবে কিন্তু।
মেকআপ
হালকা শীতে মেকআপ কেমন হবে অনেকেই বুঝতে পারে না। কারণ তখন ইচ্ছামত কমপ্যাক্টটি তো আর বোলানো যাবে না। স্কিন এমনিতেই শুকনো থাকে। তাই আগে একটা ভালো ফেসওয়াশ কিনে নাও। মিল্কি বা জেল বেসড। অয়েল কন্ট্রোল ফেসওয়াশ দরকার নেই। এইসময় লাগবে না। এবার ফাউণ্ডেশন লাগাবার আগে কোনো ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নাও। এতে মুখ শুকিয়ে যাবে না। এরপর হালকা করে ব্লাশন পাউডার লাগিয়ে নিতেই পার। আর আই মেকআপ তো ইচ্ছা মত করতে পার। গলে যাবার কোন সুযোগ নেই।
লিপস্টিক
শীতে ম্যাট খুব একটা ভালো লাগে না। শীতের জন্য গ্লসি বেশ ভালো মানায়। তবে গ্লসি পছন্দ না হলে, হালকা ক্রিমি লিপস্টিক বেঁছে নিতে পার। যে কোনো ডার্ক শেড শীতে অনায়াসে পরা যায়। আর ঠোঁট খুব ফাটলে কাজের ফাঁকে লিপবাম লাগিয়ে নাও। এখন নানারকম কালারের লিপবাম পাওয়া যায়।
শীতে যদি থাকে ইন্টারভিউ
শীতে যদি থাকে ইন্টারভিউ তখন কিভাবে সাজবে? শীতে ইন্টারভিউ থাকলে ফরমাল শার্ট প্যান্ট আর ওপরে ব্লেজার পরা যেতে পারে।এক্ষেত্রে হালকা রঙ পছন্দ করা শ্রেয়।ব্লেজার কালো পড়াই যায়। চড়া সাজ যেন না হয়। আর মেকআপ অবশ্যই হবে হালকা। হালকা ক্রিমি লিপস্টিক। সঙ্গে একটা পনিটেইল করা যায়।সঙ্গে মানানসই জুতো। আর হাতে একটা ঘড়ি। ব্যাস রেডি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *