চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার বটতলী মৌজার ভূমি অবৈধ রেজিস্ট্রেশন ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিনটি খতিয়ান জারি হওয়ায় কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কাছে তথ্য গোপন করে এবং ওয়ারিশ বাদ দিয়ে বিতর্কিত জায়গার রেজিস্ট্রেশন করার অভিযোগও উঠেছে দলিল প্রস্তুতকারী ভেন্ডরের বিরুদ্ধে। এদিকে, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে খতিয়ান জারির অভিযোগ উঠেছে তৎকালীন বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও। শুধু তাই নয় এমন কাজে অনৈতিক অর্থ ভাগবাটোয়ারা করেছেন এসি ল্যান্ডসহ বর্তমান কানুনগো মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ও ভূমি সহকারী কর্মকতার্(ভূসক) লক্ষীন্দর দাশ।
এদিকে, এসিল্যান্ড বলেছেন তিনি কিছুই জানেন না। এমন ঘটনা তাঁর আমলে ঘটেছে কিনা মনে নেই। ভূমি সহকারী কর্মকতার্ লক্ষীন্দর দাশের প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে অনৈতিকভাবে খতিয়ান ইস্যু করা হয়েছে এমন অভিযোগ ভূমির ওয়ারিশের। তথ্য লুকিয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধনের জন্য দলিল প্রস্তুতকারীকেও আইনের আওতার আনার দাবি জানিয়েছেন অবৈধভাবে রেজিস্ট্রিকৃত ভূমির ওয়ারিশ আব্দুল মোমেন। তিনি এ বিষয়ে দুদকের কাছে অভিযোগ দাখিল করার কথা জানিয়েছেন প্রতিবেদককে।
প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে লক্ষীন্দর দাশের গত বছরের ৫ জুলাই তারিখের প্রতিবেদনে পরিষ্কার ভাবে উল্লে্যখ করা হয়েছে নামজারি মামলা ২৪৭১/২২, ২৪৭২/২২ ও ২৪৭৩/২২ এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতের জেলা যুগ্ন জজ এর ১ম আদালতে মামলা (মিছ নং ৩৮৪/২০২২, ২৪২/২০২২ ও ৪৭৩/২০২২) চলমান রয়েছে। শুনানীর মাধ্যমে আপত্তিকৃত এসব নামজারি মামলা নিষ্পত্তির জন্য বাকলিয়া ভূমি কার্য্যালয়ের সহকারী কমিশনার আতিকুর রহমানের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেছেন ভূসক লক্ষীন্দর দাশ ।
ক্ষতিগ্রস্ত আবদুল মোমেন সময়ের কাগজকে বলেন, আমরা ওয়ারিশ সূত্রে এ জায়গার মালিক। গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতের ১ম যুগ্ন জেলা জজ নামজারি মামলা নং ২৪৭২/২০২২ এর যাবতীয় কার্যক্রমে স্থিতাবস্থার আদেশ দেওয়ার পরও সহকারী কমিশনার ভূমি আতিকুর রহমান গত বছরের ২৫ আগস্ট কিভাবে খতিয়ানে স্বাক্ষর করেছেন এমন ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী এ বিষয়ে প্রত্যক্ষ শুনাণীতে আমাকে যেতে বলেছে। এতে সুরাহা না হলে আমি দুদকের কাছে যেতে বাধ্য হবো।
এ ব্যাপারে বাকলিয়া ভূমি সার্কেলের সাবেক সহকারী কমিশনার আতিকুর রহমান সময়ের কাগজকে বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা ভূমি মালিককে খতিয়ান ইস্যু করার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। আমি এখন বরিশালের জেলা প্রশাসকের কায্যার্লয়ে কর্মরত আছি। এর আগে চট্টগ্রামের বাকলিয়া সার্কেলে কর্মরত ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার সময়ে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার মনে নেই। অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে এমন খতিয়ান ইস্যু করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এভাবে খতিয়ান ইস্যু করার কি কোন সুযোগ আছে।
এ ব্যাপারে বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার(ভূমি) জামিউল হিকমা সময়ের কাগজকে বলেন, অভিযোগকারীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন আমি বিষয়টি দেখবো। আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে যদি কোন খতিয়ান ইস্যু করা হয় তা আবার বাতিলও করা যাবে। অভিযোগকারীকে শুনাণীতে রাখতে হবে।
অভিযোগ উঠেছে, বাকলিয়া সার্কেলের সরকারী কমিশনার মোহাম্মদ আতিকুর রহমানকে মোটা অঙ্কে প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিত ভূমির ওয়ারিশ বাদ দিয়ে নামজারি করেছেন মুহাম্মদ সাইফুল আলমের নামে। গত বছরের ১৭ আগস্ট বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার ভূমি সাইফুল আলম গংদের তিনটি বিএস খতিয়ান ইস্যুর জন্য ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। পূর্ব মাদারবাড়ীস্থ মাঝিরঘাট সংলগ্ন কালাম টাওয়ারের মুহাম্মদ সাইফুল আলমকে বিতর্কিত জমি ক্রয়ে সহায়তা করেছেন ভেন্ডর। সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কাছে তথ্য গোপন করে এবং ওয়ারিশের বিষয়টি লুকিয়ে ভেন্ডর অবৈধ দলিল লুফে নিয়েছেন।
চট্টগ্রামের সদর সাব-রেজিষ্ট্রার দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮মে এবং ১৯ মে’২০২২ বটতলী মৌজার ৬৬২/২ ও ৬৬২/৩ নং খতিয়ানের বিপরীতে দলিল নং— ৭৯১১, ৭৯১২ ও ৭৯১৩ রেজিস্ট্রী হয়েছে। বন্টননামা ছাড়াই প্রায় ৯ গন্ডা ৩ কন্টক জমি মুহাম্মদ সাইফুল আলম গং, আজিজুল ইসলাম গং ও সাইদুল আলম চৌধুরী এই তিনটি দলিলে ভূমি রেজিস্ট্রি নিয়েছেন। এতে অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের ২৩ ধারা অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। আবার ক্রেতাদের বিরুদ্ধে গোপেনে জমি ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। আবার দলিল লেখক কিভাবে ওয়ারিশ বাদ দিয়ে দলিল সম্পাদন করেছেন তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
২৪ঘণ্টা.জেআর
Leave a Reply