হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রী

নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হল ছেড়েছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুম।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ছেড়ে চলে যান। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম তাদের হল ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল ওই শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতনকারী দুজনকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়। আর নির্যাতনের কোনো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়ে থাকলে বিটিআরসি যেন তা দ্রুত অপসারণ করে, সে নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

রুলে ইবির ছাত্রী হলে শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, ইবির উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ইবির এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় গত বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। পরে আদালত এ ব্যাপারে লিখিত আবেদন জমা দিতে বললে ওই দিনই তিনি রিট আবেদন করেন। গতকাল আদালতে গাজী মো. মহসীন নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আইনজীবী গাজী মো. মহসীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছাড়াও ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতনকারী দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে। আর নির্যাতনের কোনো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়ে থাকলে বিটিআরসি যেন তা দ্রুত অপসারণ করে সে নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পাশাপাশি আদালত এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, ইবিতে ভর্তির কয়েক দিনের মাথায় ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন এক ছাত্রী। ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের এ ঘটনায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ৯ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাত ৮টায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাবাসসুম। ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। তবে হলের প্রভোস্টের সহযোগিতায় তখন সেটি সম্ভব হয়নি। পর দিন ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭ থেকে ৮ জন মিলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নির্দেশনা পেয়ে আমি তাদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেই। প্রক্টরের সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা সন্ধ্যার পরই হল ছেড়ে চলে যান।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি অভিযুক্ত দুজনকে হল থেকে চলে যাওয়ার বিষয়ে হল প্রভোস্টকে নির্দেশ দেই। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ছাত্রীর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ইবি থানার ওসিকে বলেছি। বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়টি দেখাশোনা করার জন্য আইন প্রশাসককে বলা হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাকে সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বিষয়টি জানিয়েছেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *