জন্মনিবন্ধনের জন্য ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে হোয়াটস এ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হচ্ছে । মাত্র ১২/১৫শ’ টাকায় কমার্শিয়াল দোকান থেকেই প্রতারণা করছে চক্র। জন্মনিবন্ধনে শুধু শহর নয় গ্রামেও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ কারসাজিতে মেতেছে চক্র। অনলাইনেই কাজ করছে হ্যাকারসহ বিভিন্ন প্রতারক।
সাইবার ক্রাইম ফুটেজ ও সিস্টেম থেকে এ ধরনের অপরাধীদের সনাক্তকরণ হচ্ছে। ‘বার্থ এন্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন’র নামে পেইজ খুলে বসা এ ধরনের সিন্ডিকেট থেকে যারা জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট নিয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ ও ভূয়া। তবে সোশ্যাল মিডিয়া জন্ম নিবন্ধনের নামে অনেক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ রয়েছে। রোহিঙ্গারা অসাধু এসব ম্যাসেঞ্জার গ্রুপকে ব্যবহার করে পাসপোর্ট আদায়ের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে পাঁচলাইশস্থ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে ব্যবহার করছে এমন অভিযোগ রয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে। বার্থ এন্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন সংশোধন ও নিবন্ধনের নামেই খোলা হয়েছে অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদ। লাইক বা কমেন্টের মাধ্যমে এডমিনের ইনবক্সে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ডিসি লিয়াকত আলী খান সময়ের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা আপনাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে চাই। হোয়্যাটস এ্যাপ গ্রুপে এবং ইমো এসব অপরাধী তথ্য আদান প্রদান করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এ পর্যন্ত তারা ৪/৫ হাজার কাজ করেছে। বাস্তব জীবনে তাদের অবস্থানের ও বসবাসের পরিবর্তন ঘটছে। কাঁচা ঘর থেকে দালান হয়েছে। শত শত পিডিএফ ফাইল তৈরী করে সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে আপলেঅড দিচ্ছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এডিসি আসিফ মহিউদ্দিন সময়ের কাগজ পত্রিকার প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন , জন্মনিবন্ধন জালিয়াত চক্রকে ধরতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অভিযান চালাতে হয়েছে। চট্টগ্রাম, নড়াইল, ঢাকা , গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে চক্রের ৩ জন হ্যাকারকে আটক করা হয়েছে একটি মামলায়। তাদের তথ্য অনুযায়ী আরো দুজনকে আটক করার পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জনগনকে সচেতন করা গেলে আমাদের অভিযান স্বার্থক হবে।
জেল হাজতে থাকা জহির ও মোস্তাকিমের তথ্য অনুযায়ী গত ১৬ ফেব্রুয়ারী নগরীর মুরাদপুর এলাকার সাগর আহমেদ জোভানকে আটক করে কাউন্টার টেরোরিজম। এরপর নড়াইলের লোহাগাড়া থানা এলাকা হতে জন্ম নিবন্ধনের হ্যাকার শেখ সেজানকে আটক করা হয়। তার পরিচালিত আদনান কম্পিউটার এন্ড স্টুডিও থেেকে জালিয়াতি কাজে ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। সেজানের তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কলাবাগান এলাকা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কপোর্রেশনের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেটের সীল ও অফিসের প্যাডসহ মেহেদী হাসানকে আটক করা হয়। হ্যাকার জেভান ও সেজানের তথ্যানুযায়ী সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকা থেকে হ্যাকার সাকিল হোসেনকে আটক করা হয়। শাকিলের তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুরের বাসন থানা এলাকা থেকে আরেক হ্যাকার মাসুদ রানাকে আটক করে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, থানার রেকর্ডের ভিত্তিতে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্তে নেমে ভূয়া জন্ম নিবন্ধনের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। খুলশী থানার মামলায় গ্রেফতারকৃত জহির ও মোস্তাকিম চট্টগ্রাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারী ১৪ নং ওয়ার্ড ২৩৯টি এবং ১১ জানুয়ারী থেকে ২২ জানুয়ারী পর্যন্ত ১১ নং ওয়ার্ডে ৪০৯ টি ভূয়া জন্ম নিবন্ধনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর আগে গত ৮ জানুয়ারী বন্দর থানাধীন ৩৮নং ওয়ার্ড অফিসে ৪০টি, ৯ জানুয়ারী ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১০টি এবং ২১ জানুয়ারী পতেঙ্গার ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের সার্ভারে ৮৪টি ভূয়া জন্ম নিবন্ধনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী কাউন্টার টেরোরিজম অভিযানে নেমে নাবালক জহির আলম, মো¯তাকিম, দেলোয়ার হোসেন সাইমন ও আব্দুল রহমান প্রকাশ আরিফকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
২৪ঘণ্টা.জেআর
Leave a Reply