লোহাগাড়ায় প্রবাসীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার : স্ত্রী, শাশুড়ী ও শালিকা আটক

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুটিবিলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড পহরচান্দার পাহাড়ী টিলা এলাকার নালায় মাটিচাপা অবস্থায় মনছুর আলী (২৭) নামে এক দুবাই প্রবাসীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত মনছুর আলীর স্ত্রী রিনা আক্তার (২৩), শ্বাশুড়ী সায়রা বেগম (৪৭) ও শালিকা রুম্মান আকতার (১৬) কে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী অভিযানের পর দুপুর পৌনে ১২টায় নিহত মনছুর আলীর অর্থগলিত লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের পূর্ব পহরচান্দা সেকান্দর পাড়ার ফয়েজ আহমদের পুত্র। তিনি দুই সন্তানের জনক বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে দেশে আসেন মনছুর আলী। পরের দিন গত ১ মার্চ তিনি নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় গত ২ মার্চ তাঁর বোন বুলবুল আক্তার বাদী হয়ে লোহাগাড়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন। গত ৮ মার্চ ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামীয় আসামীদের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া থানায় একটি অপরহণ মামলা দায়ের করেন বুলবুল। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তদন্ত শুরু করেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম পিপিএম। মামলা তদন্তের এক পর্যায়ে তিনি অপহরণ ঘটনার ক্লু উদঘাটন করতে সক্ষম হন। অতপর : নিখোঁজের ১৪ দিন পর মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দুর্ঘম পাহাড়ি এলাকায় মাটি চাপা অবস্থায় তার লাশটি উদ্ধার করেন।

লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মাদ আতিকুর রহমান জানান, গত ২ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটে লোহাগাড়ার পুটিবিলা ইউনিয়ন ফকির হাট এলাকা থেকে অজ্ঞাত ৪/৫ জন লোক সিএনজি যোগে পুটিবিলা পূর্ব পহরচান্দার সেকান্দর পাড়ার ফরিদ আহমদের ছেলে মনছুর আলী (২৭) নামের এক দুবাই ফেরত যুবককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অপহরণের শিকার মনছুরের বোন বুলবুল আকতার বাদী হয়ে গত ৮ মার্চ লোহাগাড়া থানায় অপহরণ মামলা (নং- ১৫, তারিখ : ০৮/০৩/২০২৩) দায়ের করেন।

মামলাটি তদন্তকালে আর্থিক লেনদেন, অনৈতিক সম্পর্কের সন্দেহ ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে শশুর বাড়ীর লোকজনের সাথে ভিকটিম মনছুর আলীর বিরোধ চলছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরেই ভিকটিম মনছুর আলী অপহৃত হতে পারেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে তার স্ত্রী রিনা আক্তার (২৩), শাশুড়ী ছায়েরা খাতুন (৪৭) এবং শালিকা রুম্মান আক্তার (১৬) পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তারা জিজ্ঞাসাবাদকালে ভিকটিমের অবস্থান সংক্রান্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিকটিম মনছুর আলীর সাথে কথোপকথনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে পহরচান্দা এলাকায় ঘটনায় জড়িত ধৃত আসামী মনছুর আলীর স্ত্রী, শাশুড়ী ও শালিকাকে নিয়ে গতকাল ১৪ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমানের তত্ত্বাবধানে লোহাগাড়া থানার ওসি মুহাম্মদ আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে সঙ্গীয় এসআই শরিফুল ইসলাম পিপিএম, এসআই যুযুৎসু যশ চাকমা, এসআই মোঃ নুরুন নবী, এএসআই আলমগীর হোসেন এবং স্থানীয় ২০/২৫ জন লোকসহ লোকালয় হতে প্রায় তিন মাইল দূরে পুটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দার দূর্গম পাহাড়ী টিলা এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ধৃত রিনা আক্তার (স্ত্রী), ছায়েরা খাতুন (শাশুড়ী), এবং রুমন্নান আক্তার (শালিকা) দের তথ্যমতে দুপুর পৌনে ১২টায় আসামীদের বাড়ী হতে অনুমান ৩০০ গজ দক্ষিণ-পশ্চিমে লোহাগাড়া থানাধীন পুটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দা পাহাড়ীটিলার পার্শ্ববর্তী নালায় মাটি চাপা ও উপরে ঝোপঝাড় দেয়া অবস্থায় ভিকটিম মনছুর আলীর লাশ পুতে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমের ভাই খোরশেদ আলম লাশটি সনাক্ত করেন। মৃত দেহটি সম্পূর্ণ গলে গেছে। শরীর হতে চামড়া খসে গেছে। লাশটি সুরুতহালকালে মাথার ডান পার্শ্বে বড় ধরনের কাটা জখম, মৃতের দুই কান, নাক, মুখ এবং থুতনি শরীর হতে কেটে বিচ্ছিন্ন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহৃ লক্ষ্য করা যায়।
মামলাটি তদন্তাধীন এবং ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

নিহতের আত্মীয় মো : ফোরকান জানান, মনচুর আলম লেদু দুবাই প্রবাসী। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে তার পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। তার সাথে শালিকার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমরা এ হত্যাকান্ডের সুষ্টু বিচার চাই।

নিহতের বড় ভাই খোরশেদ আলম জানান, আমার ছোট ভাই মনচুর দেশে ফেরার পরের দিন হতে নিঁখোজ হন। শ্বশুর বাড়ির পরিবারের সদস্যদের সাথে তার বিরোধ ছিল। শালিকার সাথে পরকীয়া ছিল। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই। এ ঘটনায় জড়িতের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

স্থানীয় পুটিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোছেন মানিক জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। মনচুর আলম দুবাই প্রবাসী ও একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। নিখোঁজের আগের দিন তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। ১৪দিন পর তাঁর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

এদিকে, এ ঘটনায় আটক নিহত মনছুর আলীর স্ত্রী রিনা আকতার, শ্বাশুড়ী সায়েরা বেগম, শালিকা রুম্মান আকতারকে আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হবে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরিফুল ইসলাম পিপিএম।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *