দক্ষিণ আফ্রিকার সিংহ ও ওয়াইল্ড বিস্ট এলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়

দক্ষিণ আফ্রিকার বনভূমি থেকে সোজা উড়িয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হলো জোড়া সিংহ। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়ও নিঃসন্তান সিংহ দম্পতি বাদশা-নোভা পেল প্রতিবেশী। আবার এই সিংহ জুটি একা আসেনি, তাদের সঙ্গে এসেছে চার জোড়া ওয়াইল্ড বিস্টও।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাতেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এসে পৌঁছায় সিংহ ও ওয়াইল্ড বিস্ট।

চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তৌহিদুল ইসলাম শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, দরপত্রের মাধ্যমে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকায় সিংহ, ম্যাকাও, ওয়েলবিস্ট, ক্যাঙ্গারু, লামা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ চালানে সিংহ ও ওয়াইল্ড বিস্ট চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হয়। এর আগে গত ২১ অক্টোবর নেদারল্যান্ডস থেকে ছয়টি ক্যাঙ্গারু ও ছয়টি লামা আনা হয়। ফেব্রুয়ারিতে আসে তিন জোড়া লাল-সবুজ ম্যাকাও পাখি।

তিনি আরও বলেন, নতুন আসা সিংহ-সিংহীর বয়স ৯ মাস থেকে ১২ মাসের মধ্যে। দুই বছরের মধ্যে সেগুলো প্রজনন সক্ষম হবে। তৃণভোজী ওয়াইল্ড বিস্টের মূল নিবাসও দক্ষিণ আফ্রিকায়। এক বছরের কম বয়সী প্রাণীগুলোও মেফুনিয়াম প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা হয়েছে।

এছাড়া কয়েকদিনের মধ্যেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় একজোড়া জলহস্তী আনা হচ্ছে। প্রাণী বিনিময়ের আওতায় ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে জলহস্তীগুলো আনা হচ্ছে। আমরা সেখানে একজোড়া বাঘ দিচ্ছি। রমজানের মধ্যেই জলহস্তীগুলো নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, বিড়াল পরিবারের সিংহের দুটি উপ-প্রজাতি এখন বিশ্বে টিকে আছে। আফ্রিকান সিংহ এবং এশীয় সিংহ। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসা সিংহগুলো আফ্রিকান, তবে ক্যাপটিভ ব্রিডিং বা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সেগুলোর জন্ম।

তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা আর বাংলাদেশের মধ্যে পরিবেশগত তেমন কোনো পার্থক্য নেই। টেমপারেচার প্রায় একই। আমরা এর আগেও গাজীপুর সাফারি পার্কে এবং ঢাকা চিড়িয়াখানায় সিংহ এবং ওয়াইল্ড বিস্ট সরবরাহ করেছি। সেখানে কোনো সমস্যা হয়নি। প্রাণীগুলো বেঁচে আছে। ব্রিডিংও হয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের তত্ত্বাবধানে ১৫ দিন প্রাণীগুলো কোয়ারেনটাইনে থাকবে। এরপর সেগুলোর সুস্থতা নিশ্চিত করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বুঝে নেবে।

ফ্যালকন ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মো. সোহেল আহমেদ বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার মেফুনিয়েম নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা সিংহগুলো সংগ্রহ করেছি। তারা প্রায় ৫৫০ হেক্টর বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী লালনপালন করে এবং বিক্রি করে। যেহেতু বনের প্রাকৃতিক পরিবেশে সেগুলোর জন্ম হয়নি, সেজন্য ক্যাপটিভ ব্রিডিং আমরা বলছি।

সূত্র মতে, ২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় রাজ-লক্ষ্মীর ঘরে জন্ম নিয়েছিল দুটি সিংহী বর্ষা আর নোভা। জন্মের কিছুদিন পর মা লক্ষ্মী এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা রাজ মারা যায়। পুররুষবিহীন নিঃসঙ্গ অবস্থায় দুই বোন প্রায় ১১ বছর কাটানোর পর ২০১৬ সালে নোভার জন্য রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে সঙ্গী আনা হয় বাদশাহকে। আর বর্ষাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রংপুরে।

একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর চিড়িয়াখানায় ঘটা করে সিংহ বাদশাহ ও সিংহী নোভার বিয়ে হয়। কিন্তু তাদের কোনো সন্তান হয়নি। প্রায় ১৮ বছর বয়সী নিঃসন্তান নোভা-বাদশাহ সাত বছর ধরে শূন্য ঘরে দিন কাটিয়ে এখন বার্ধক্যে উপনীত। আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় যেকোনো সময় তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের।

এ অবস্থায় ২০২১ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে সিংহ চেয়ে চিঠি দিয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক বছর পরও সে চিঠির সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ২০২২ সালের আগস্টে সিংহ, লাল-সবুজ ম্যাকাও, ওয়াইল্ড বিস্ট, ক্যাঙারু এবং লামা প্রাণী সরবরাহের জন্য এক কোটি ৬৯ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে। ফ্যালকন ট্রেডার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় আগস্টের শেষে তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

বাঘ ছাড়াও চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে রয়েছে জেব্রা, ভাল্লুক, সিংহ, হরিণ (চিত্রা, সাম্বার, মায়া), উল্লুক, বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, অজগর, বাঘডাসা, উটপাখি, ইমু পাখি, গয়াল, কুমির, ময়ূর, ঘোড়া, বক, টিয়াসহ ৭৩ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে চিড়িয়াখানা ২০১৯ সালে দলগতভাবে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক অর্জন করে। ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চিড়িয়াখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *