চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় প্রায় দুই একর সরকারি খাস জায়গার গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের নাম আবুল কালাম আবুলু। সে উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মসকানিয়া রবি টাওয়ার এলাকার একটি দুই একর সরকারি টিলার অধিকাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ওই টিলায় ১ হাজার ৫’শ টি আকাশমনি গাছ ছিল। এরমধ্যে প্রায় ১ হাজার ২’শ টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা গাছের মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
যে টিলাটির গাছ কাটা হয়েছে, সেটি চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায়। তবে বনবিভাগের দাবি, জায়গাটি তাদের নয়, এটি সরকারি খাস জায়গা। এলাকাটি বন্যহাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। গাছ কাটার পরে টিলাটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে টিলাটির অন্যান্য ছোট উদ্ভিদ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, বনাঞ্চলে কোনভাবেই আগুন দেওয়া যাবে না। কারণ, আগুনে চারাগাছ ও গাছের বীজ পুড়ে যায় এবং মাটির শক্তি কমে যায়। এতে উদ্ভিদের বংশবিস্তার করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া বনাঞ্চল আগুনে পুড়ে গেলে প্রাণীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। অনেক কীটপতঙ্গ ও পাখির আবাস্থল ধ্বংস হয়। অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের খাবার ধ্বংস হয়। ফলে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে।
চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে একমাস আগে আমরা ওই এলাকায় যাই। ইউপি সদস্য আবুল কালামের নেতৃত্বে গাছগুলো কাটা হচ্ছিল। তিনি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন এবং মৌখিকভাবে আর গাছ না কাটার অঙ্গীকার করেছেন। পরে আমরা কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হই, জায়গাটি বনবিভাগের নয়। এটি সরকারি খাস জায়গা। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।
গাছ কাটার অভিযোগ স্বীকার করলেও ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। কেটে ফেলা গাছও জব্দ হয়নি।
বনবিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউপি সদস্য আবুল কালামের বিরুদ্ধে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটার অপরাধে একটি মামলা হয়েছিল। বন আইনে ওই মামলাটি হয়েছিল ২০১৬ সালে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, যখন আমরা খবর পাই, তখন কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছিল। ওই ইউপি সদস্যকে গাছ কাটতে নিষেধ করা হয়েছিল। এরপরে আর গাছ কাটা হয়েছে কিনা জানি না। জায়গাটির ব্যাপারে কাগজপত্র যাচাই করে দেখতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবুল কালাম প্রথমদিকে গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গাছ কাটার সময় এসিল্যান্ড ও বনবিভাগের কর্মকর্তারা বাঁধা দেওয়ার পর গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি।
বন আইনে ২০১৬ সালের মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মামলাটি দেওয়া হয়েছিল।
জানতে চাইলে চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই ইউপি সদস্য যদি সরকারি খাস জায়গার গাছ কেটে থাকেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ বলেন, খাস জায়গা থেকে গাছ কাটার বিষয়টি জানতাম না। এখন জানলাম। বিষয়টি আমি দেখছি। তারপর ব্যবস্থা নেব।
২৪ঘণ্টা.জেআর
Leave a Reply