চট্টগ্রামের ২১ ওয়ার্ডে মিলেছে এডিসের লার্ভা

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ২১টি ওয়ার্ডেই মিলেছে এডিস মশার প্রজননস্থল। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা শনাক্তের পাশাপাশি কোন কোন ওয়ার্ডের লার্ভার ঘনত্বও অনেক বেশি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এডিস মশার উপর পরিচালিত স্বাস্থ্য বিভাগের এক জরিপে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।

গতকাল সোমবার জরিপের প্রতিবেদন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। যেখানে আধুনিক ও সময়োপযোগী গাইড লাইনের ভিত্তিতে মশক নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চসিককে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়।

এর আগে গত ৮ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ১৩ দিন নগরীতে এডিস মশার জরিপ পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চার সদস্যের একটি দল। এসময় তাঁরা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে মশার প্রজননস্থল শনাক্তের পাশাপাশি এডিস লার্ভার নমুনা সংগ্রহ করেন। যাতে সিটি কর্পোরেশনের ২১টি ওয়ার্ডের ৩২০ টি বাড়ি এবং ৪শ’টি পাত্রের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যাতে বাসা বাড়ির পাশাপাশি পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র ও ফুলের টবে সবচেয়ে বেশি এডিসের উপস্থিতি পায় তারা।

স্বাস্থ্য বিভাগের জরিপে বলা হয়, ৩২০টি বাড়ির মধ্যে ৯৭টিতে এডিসে লার্ভা পাওয়া যায়। অর্থাৎ ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ বাড়িতেই এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি লার্ভার অস্তিত্ব মিলেছে প্লাস্টিক কন্টেইনারের মধ্যে। ২১টি ওয়ার্ডের ৪’শ কন্টেইনারের মধ্যে ১৪৮টিতেই লার্ভা শনাক্ত হয়েছে। যা ৩৭ শতাংশ। এরবাইরে পরিত্যক্ত বিভিন্ন প্লাস্টিক কন্টিনারের জমানো পানিতে সর্বোচ্চ শতকরা ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ, পরিত্যক্ত টায়ারে ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, প্লাস্টিক ড্রামে শতকরা ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, মাটির পাত্রে শতকরা ৮ দশমিক ১১ শতাংশ, পানির হাউস, ফুলের টব ও এলুমিনিয়াম সিটে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, প্লাস্টিকের বালতিতে ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং লিফটের গর্তে জমানো শতকরা ২ দশমিক ৭ শতাংশ এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

২১টি ওয়ার্ড হচ্ছে : ২ নম্বর জালালাবাদ, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর, ৮ নম্বর শুলকবহর, ৯ নম্বর উত্তর-পাহাড়তলী, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখানবাজার, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম, ১৬ নম্বর চকবাজার, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গী বাজার, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ও ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড।

এদিকে, আধুনিক ও সময়োপযোগী গাইড লাইনের ভিত্তিতে মশক নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চসিককে ৯ দফা সুপারিশ করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য ডা. মো. মহিউদ্দিন। এরমধ্যে অফিস আদালত ও বাসাবিড়র আঙিনা ছাদ ও আশপাশ এলাকা সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং কোন ধরনের পাত্রে ৩ থেকে ৪ দিন বেশি পানি জমতে না দেয়া। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিলবোর্ড প্রদর্শন, নিয়মিত মাইকিং, লিফলেট বা পোস্টার বিতরণ এবং কাউন্সেলিং করা, জনগণকে সম্পৃক্ত করে মশার প্রজনন স্থান নির্মূল করা ও ওয়ার্ড ভিত্তিক কীটনাশক ছিটানোর কার্যক্রম যথাযথভাবে করা হলে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব এবং ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্তের হার কম হবে, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বছরব্যাপী জরিপ পরিচালনা করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ, মশক নিধনের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশকের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা, লার্ভিসাইড এবং এডাল্টিসাইড সময়োপযোগী প্রয়োগ করা, সূর্যোদয়ের পরপর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এডালটিসাইড ফগিং করা, দক্ষ মশক নিধন কর্মীর দ্বারা কীটনাশক ছিটানোর সময় মনিটরিং টিম গঠন করে সুপারভিশন জোরদার করা এবং চসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনপূর্বক আধুনিক ও সময়োপযোগী গাইড লাইন ভিত্তিতে মশক নিধন কার্যক্রম করার সুপারিশ করা হয়।

জরিপটি পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কীটতত্ত্ববিদ মো. মফিজল হক শাহ, জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওস, বিভাগীয় এন্টোমোলজিক্যাল টেকনিশিয়ান মো. মাকসুদুর রহমান ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এন্টোমোলজিক্যাল টেকনিশিয়ান সৈয়দ মো. মঈন উদ্দীন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *