চট্টগ্রামে নৌকার বিরুদ্ধে ৮ আওয়ামী লীগ নেতার ‘স্বতন্ত্র’ লড়াই

চট্টগ্রামের ১৬টির আসনের মধ্যে আটটিতেই আওয়ামী লীগের নৌকার বিরুদ্ধে ‘স্বতন্ত্র’ লড়াইয়ে নেমেছেন ৮ আওয়ামী লীগ নেতা, যার মধ্যে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্যও। এছাড়া একটি লাঙ্গলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। ইতিমধ্যে এসব আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে।

৮ আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে পটিয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্রের লড়াইয়ে নামা চারজনই সদ্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। এরা হলেন মিরসরাইয়ের আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন, ফটিকছড়ির হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, চন্দনাইশের আবদুল জব্বার চৌধুরী ও সাতকানিয়ার আবদুল মোতালেব। এই তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম-১০ আসনে সাবেক মেয়র মনজুর আলম এবং চট্টগ্রাম-১১ আসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। এছাড়া লাঙ্গলের বিরুদ্ধে সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম আছেন লড়াইয়ে।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) : রুহেল বনাম গিয়াস
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নির্বাচন করছেন না। তার বদলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মাহবুব উর রহমান রুহেল। তবে মিরসরাইয়ের সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাকে রুহেলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন— বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. ইউসুফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নুরুল করিম আবছার, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল মান্নান এবং জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ এমদাদ হোসাইন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) : সনি বনাম তৈয়ব
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে অনেক নাটকীয়তার পর শেষমেশ নৌকায় উঠতে পারলেন না বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে তিনি তিন তিনবার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তাকে ‘ফুলের মালা’ প্রতীক নিয়েই ভোট করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে ভোটের লড়াই থেকে তিনি ছিটকে পড়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

সবমিলিয়ে ফটিকছড়িতে এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়বের মধ্যে।

এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন— বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী, ইসলামিক ফ্রন্টের মীর মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম, জাতীয় পার্টির মো. শফিউল আজম চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্টের মো. হামিদ উল্লাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান।

চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) : বাচ্চু বনাম মনজুর
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। ধারণা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র মনজুর আলমের। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ।

এছাড়া এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও ছয় প্রার্থী। তারা হলেন— তৃণমূল বিএনপির মো. ফেরদাউস বশির, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আলমগীর হোসেন বঈদী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবুল বাশার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম পার্টির মিজানুর রহমান, জাতীয় পার্টির জহুরুল ইসলাম এবং জাসদের মো. আনিসুর রহমান।

চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) : লতিফ বনাম সুমন
এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের।

এছাড়া এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন— ইসলামিক ফ্রন্টের আবুল বাসার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম পার্টির মো. মহিউদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত, এনপিপির নারায়ণ রক্ষিত ও গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) : মোতাহের বনাম সামশু
অনেক নাটকীয়তার পর এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। ধারণা করা হচ্ছে, ভোটের লড়াই সীমিত থাকবে এই দুজনের মধ্যে।

এছাড়া এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও ছয় প্রার্থী। তারা হলেন— জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী এম এয়াকুব আলী, জাতীয় পার্টির মো. নুরুচ্ছফা সরকার, ইসলামিক ফ্রন্টের কাজী মো. জসিম উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির রাজীব চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের সৈয়দ মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জিহাদী এবং ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) : নজরুল বনাম জব্বার
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরীর।

এছাড়া এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও ছয় প্রার্থী। তারা হলেন— বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, বিএনএফের মো. গোলাম ইসহাক খান, বিএসপির মো. আইয়ুব, জাতীয় পার্টির আবু জাফর মো. ওয়ালিউল্লাহ, তরীকত ফেডারেশনের মো. আলী ফারুকী এবং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ আবুল হোসাইন।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) : নদভী বনাম মোতালেব
এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। তার বিপরীতে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব।

এছাড়া এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন— জাতীয় পার্টির মো. ছালেম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আলী হোসাইন, কল্যাণ পার্টির সোলায়মান কাশেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. হারুণ ও মুক্তিজোটের মো. জসিম উদ্দিন।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) : মোস্তাফিজ বনাম মুজিব
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। নানা কারণে বিতর্কিত এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান।

এছাড়া এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও আট প্রার্থী। তারা হলেন— স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামান, এনপিপির মুহাম্মদ মামুন আবছার চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. মহিউল আলম চৌধুরী, কংগ্রেসের এম জিল্লুর করিম শরীফি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবদুল মালেক, ন্যাপের আশীষ কুমার শীল ও ইসলামী ঐক্যজোটের মো. শওকত হোসেন চাটগামী।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) : শেঠ বনাম ছালাম
এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে সেখানে সমর্থন দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠকে। ফলে শেঠের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের।

এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও আট প্রার্থী। তারা হলেন— ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত বিএনএফের প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহিবুর রহমান বুলবুল, তৃণমূল বিএনপির সন্তোষ শর্মা, কল্যাণ পার্টির মো. ইলিয়াছ, ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. কামাল পাশা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবদুল নবী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *