ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সাগরে নেমেছিল চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। কিন্তু উত্তাল সাগরে ঝুঁকি নিয়ে নেমে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা না পেয়ে হতাশ জেলেরা। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের প্রত্যাশা, সামনে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়বে। সাগর উত্তাল থাকায় এ মুহূর্তে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না।

বর্ষা মৌসুমে সাগরে ইলিশের আনাগোনা বেশি থাকলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে আষাঢ় মাসে মাছ শিকার করতে পারেনি জেলেরা। শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা শেষে গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে সাগরে নেমেছিল চট্টগ্রাম উপক‚লীয় এলাকার জেলেরা। লঘুচাপের কারণে গত কয়েকদিন ধরে সাগর উত্তাল। এর মাঝে ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে নেমেও হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। অথচ রূপালি ইলিশের আশায় দেনা করে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সাগরে নেমেছিল জেলেরা। কিন্তু শুরুতে ব্যর্থ তারা। কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরতে না পারলে পথে বসতে হবে উপকূলের ঋণগ্রস্ত এসব জেলেরা।

গতকাল নগরীর হালিশহর থেকে সীতাকুণ্ডের সলিমপুর পর্যন্ত উপকূলীয় মৎস্যঘাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ভরা মৌসুমে এসেও ঘাটগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতাদের কোন হাঁকডাক নেই। গত দুতিন দিন মাছ না পাওয়ায় অনেক ফিশিং বোট সাগরেই নামেনি। মাঝে মাঝে দু’একটি বোট উপক‚লে ভিড়ছে। প্রতিটি বোটে গড়ে ১০ কেজি মাছও মিলছে না। সলিমপুর এলাকার জেলে সাধন জলদাস বলেন, ‘প্রতিটি বোটে ৮ থেকে ১০ জন কর্মচারী থাকে। কিন্তু ৮-১০ কেজি মাছও পাওয়া যাচ্ছে না।’ লতিফপুর ঘাটে মাছ কিনতে এসে হতভম্ভ স্থানীয় বাসিন্দা আজমগীর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সপ্তাহখানেক আগে আমি ইলিশ মাছ কিনেছিলাম। কিন্তু এখন দাম প্রতি কেজিতে দুই থেকে তিনশ টাকা বেশি।’

অভিযোগ আছে, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে উপকূলজুড়ে অবাধে মাছ শিকার করেছেন অনেক জেলে। আইনের কোন প্রয়োগ না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার করায় সাগরে মাছের পরিমাণ প্রতিবছর কমে যাচ্ছে। দক্ষিণ কাট্টলী জেলে সর্দার খেলন জলদাস বলেন, ‘সাগরে ইলিশের দেখায় মিলছে না। নিষেধাজ্ঞার সময় নগর উপকূলে মাছ শিকার মোটামুটি বন্ধ থাকলেও অন্যান্য জায়াগায় এবার অবাধে মাছ শিকার করেছেন জেলেরা। যার কারণে নিষেধাজ্ঞার সুফল পাচ্ছেন না এখানকার জেলেরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বারুণী ঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় একহাজার বোট সাগরে নামে। জাল ও আনুষঙ্গিক খরচসহ প্রতিটি বোট মেরামত করে সাগরে নামতে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়। অনেক জেলেই ঋণ করে এই টাকা খরচ করে। কিন্তু মাছ না পেলে ঋণগ্রস্ত এসব জেলেদের পথে বসতে হবে।’

স্থানীয় জেলেরা এখন আগামী ৩ আগস্ট অমাবস্যা তিথির অপেক্ষায় আছেন। কারণ এ সময় সাগরে মাছের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাদের প্রত্যাশা এসময় সপ্তাহখানেক তাদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। জেলা মৎস্য কর্মকাতারাও আশাবাদী।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, সাগর ইলিশের আনাগোনা রয়েছে। তবে উত্তাল থাকার কারণে জেলেদের জালে মাছ আটকা পড়ছে না। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে এলে জেলেদের জালে ইলিশ প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *