রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেছেন, রেলওয়ে একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এর অনেক সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। কাজেই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অবৈধ দখলে যাওয়া রেলওয়ের সম্পত্তি ফিরিয়ে এনে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।
শনিবার (১১ জানুয়ারী) চট্টগ্রাম রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন টেনিস কোর্টে আয়োজিত রেলওয়ে পরিবার সুহৃদ সংসদ কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক সংসদ সদস্য মাহফুজুল হক চৌধুরি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সুজন বলেন, রেলওয়ের আলাদা পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী আছে। আছে রেলওয়ে হাসপাতাল ও রেল কর্মকর্তাদের জন্য বাসা। আলাদা যোগাযোগব্যবস্থা এবং পরিবহন ব্যবস্থাও আছে। সে হিসেবে আমারতো মনে হয়, রেলমন্ত্রণালয় হলো সরকারের ভেতর আরেকটা সরকার।
নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, একসময় দেশের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা ছিলো রেল ও নদীপথ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদারবাহিনী এসব যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা শহীদ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করার পর আবারও রেলব্যবস্থা আগের মতো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।
রেলপথ মন্ত্রী বলেন, বৃটিশ আমলে রেলে লোকবল ছিল ৬৮ হাজার, কিন্তু বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২৭ হাজারে । ১০৪ টি স্টেশন বন্ধ হয়ে আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলেছেন। একটি ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করে দিয়েছেন। উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে বর্তমানে রেলে অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এ সময় মন্ত্রী কিছু প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প , খুলনা-মংলা রেল সংযোগ ,বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেল লাইন নির্মাণ, যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ, বিদ্যমান সিঙ্গেল লাইনকে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর, ইলেকট্রিক ট্রাকশনে রূপান্তর, হাই স্পিড ট্রেন ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণসহ অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।
তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে এবং আখাউড়া ও লাকসামের মধ্যে ডাবল লাইনের কাজ চলমান আছে। এ অংশটুকুর কাজ সমাপ্ত হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে অধিক পরিমাণ ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে যেখানে মিটারগেজ আছে সেটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে, যেন আমরা ব্রডগেজ এর সুবিধা পেতে পারি।
বিএনপি-জামায়াত বিদেশের স্বার্থে কাজ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা রেলব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। তারা দেশে বসে বিদেশের স্বার্থে কাজ করেছে। সেসসম গোল্ডেনহ্যান্ডশেফের মাধ্যমে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদায় করে দিয়েছিল। পাহাড়তলী ওয়ার্কসপে ক্যারেজ ও ওয়াগন তৈরীর সক্ষমতা ছিল। দক্ষ লোকবলের অভাবে আমরা এখন আমদানি নির্ভর হয়ে পরেছি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর রেলকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন। মেট্রোরেল ও হাইস্পিড ট্রেন চলাচলের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-ঢাকা হাইস্পিড ট্রেনের জন্য গঠিত কমিটি ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তারপর আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করে দেব। কারণ রেলব্যবস্থা ছাড়া উন্নত দেশ গঠন করা সম্ভব নয়’ বলেন নুরুল ইসলাম সুজন।
ট্রেনকে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার চলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমি চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ ভ্রমণ করেছি। সম্প্রতি ভারতে ট্রেন ভ্রমণ করেছি। সেখানে ঘণ্টায় ১৬৭ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হয়। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশেও করা হবে। তখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ডাবল লাইনে উন্নীত করা হচ্ছে উল্লেখ নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম-আখাউড়া ডাবল লাইনে উন্নীত করা হচ্ছে। ডাবল লাইনের কাজ শেষ হলে, এখন যে সংখ্যক ট্রেন চলাচল করছে তখন এর চেয়ে ডাবল ট্রেন চালানো যাবে।
তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশে রেলওয়েতে লোকবল আছে মাত্র ২৭ হাজার। অথচ কম হলেও এই সংখ্যক লোকের জন্য দেড় লাখ লোকবল প্রয়োজন। আমরা ধীরে ধীরে এ সংকট দূর করবো।
রেল পরিবারের সন্তানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন। দুপুরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করা হয় উপস্থিত সবার জন্য। অনুষ্ঠানে রেল পরিবারের এক হাজারের বেশী সদস্য অংশ গ্রহণ করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবুর রহমান, মহাব্যাবস্থাপক (পূর্ব) মো. নাসির উদ্দিনসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রেলের সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply