২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেটি বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। তা করতে পারলেই দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা যদি এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারি, তা হলে ২০২৪ সালে আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে আমাদের অবস্থান হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০২০ এর উদ্বোধন অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা মাথায় রাখতে হবে, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া কোনো দেশ বা জাতি উন্নতি করতে পারে না। সেটা বাংলাদেশের জন্য একেবারেই সত্য। জাতির পিতা দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ থেকে ৭৮ পর্যন্ত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি। আমরা ২১ বছর পর সরকার গঠন করে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাও গ্রহণ করি, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও গ্রহণ করি। ষষ্ঠ শেষ করে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন জায়গাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, তা চিহ্নিত করেই আমরা পরিকল্পনামতো এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, শুধু শহর নয় বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের জন্য বর্তমান সরকার কাজ করছে। তাদের ভাগ্যের যাতে পরিবর্তন হয়, তারা যাতে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে, এ জন্য বর্তমান সরকার নানাবিধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমার বাড়ি আমার খামারের মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ট্রেনিং করে কম্পিউটারের মাধ্যমে আজ প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবকরা ঘরে বসে ভালো পয়সা ইনকাম করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্রদের ছেলেমেয়েরা যাতে স্কুলগামী হয়, সে জন্য তাদের বৃত্তি প্রদান করছি। বর্তমানে দুই কোটি তিন লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে আমরা বৃত্তি দিচ্ছি। সে টাকা ছাত্র-ছাত্রীর মায়েদের মোবাইল ফোনে চলে যায়। আমার বাড়ি আমার খামারের মাধ্যমে আমরা মাইক্রো সেভিংস প্রকল্প চালু করেছি। কেউ ১০০ টাকা জমাতে পারলে সরকার তাকে আরও ১০০ টাকা দিচ্ছে। দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা এসব প্রকল্প গ্রহণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছি। যে ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা লোন নিয়ে একজন বেকার যুবক ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি, এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা বিদ্যুতের উৎপাদন পেয়েছিলাম ১৬০০ মেগাওয়াট। আজ আমরা ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। ৯৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। আমাদের জিডিপি এখন ৮ দশমিক ৫ ভাগ এবং মূল্যস্ফীতি আমরা পাঁচ ভাগে নামিয়ে রাখতে পেরেছি। এর সুফল বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে। আমাদের অর্জিত সাফল্য ধরে রেখে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ’৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটি উন্নত দেশ পায়, তারা যেন মাথা উঁচু করে বাংলাদেশের পরিচয় দিতে পারে, সেভাবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। এ জন্য আমরা ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টাপ্ল্যান গ্রহণ করেছি। অদম্য বাংলাদেশ এখন থেকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাবে। এর এগিয়ে যাওয়ার গতি আর কেউ থামাতে পারবে না।

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যখন জলবায়ু বিষয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করি, আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি পাই। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কেউ আর সেভাবে পূরণ করে না। আমরা খুব সামান্য কিছু সহযোগিতা পেয়ে থাকি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি যে আমাদের উন্নত দেশগুলো এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আরও এগিয়ে আসা দরকার, আরও সহযোগিতা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের যে ক্ষতি সাধন হচ্ছে তার জন্য বাংলাদেশ কিন্তু কোনো মতেই দায়ী না। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো কিছুই করি না। কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সে কারণে যারা এই অবস্থার জন্য দায়ী তাদের সব থেকে বেশি অবদান রাখা দরকার।

নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। সেখানে আমরা নিজেদের টাকা দিয়েই এই ফান্ড করেছি।

ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সেটা প্রণয়ন করে আমরা বাস্তবায়নের কাজও শুরু করেছি। আমরা আশা করি জলবায়ু পরিবর্তনে যে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে সেটা মোকাবেলা করার মতো ইতোমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, তথ্য-প্রযুক্তি, শিল্প ক্ষেত্রে উন্নতি, আর্থ-সামাজিক উন্নতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, অর্থনৈতিক উন্নতি, কমসংস্থান বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতা এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

উন্নয়ন সহযোগীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরাও খুব বেশি শর্ত না দিয়ে সহযোগিতা করবে যেন যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি সেটাকে যেন আমরা আরও ভালোভাবে করতে পারি এবং আমাদের আশা আছে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গান এবং নৃত্যের মধ্য দিয়ে প্রধান অতিথিকে স্বাগত জানানো হয়।

আজ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ। এ ছাড়া এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ও জাইকার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ওপর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এ সেমিনারে আটটি সেশনে অংশগ্রহণ করবেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *