প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস যখন বিশ্বের ১৯৯ টি দেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরেছে তার বিপরীতে মূল ভূখণ্ড থেকে বিছিন্ন চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সাড়ে চার লক্ষ মানুষ গৃহবন্দী হয়ে চরম আতঙ্ক আর উঠকন্ঠায় দিন পার করছে।
এ যেন ছিন্ন দ্বীপের বিচ্ছিন্নাতার গল্প!
সন্দ্বীপের ৪ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে ৩১ শয্যা বিশিষ্টি একটি হাসপাতাল। সেখানে হাসপাতালটি নিয়মতান্ত্রিক চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খায় সেখানে করোনার মত প্রাণঘাতি রোগের চিকিৎসা কিভাবে দিবে তানিয়ে জনমনে সংশয় আছে!
করোনা পরীক্ষার কিট নেই। চিকিৎসকের জন্য নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সুরক্ষা পোশাক পিপিই। রোগীর জন্য নেই আইসিইউ। গত ১ মাসে প্রবাসী এসেছে ১০ হাজার।
উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসের তথ্যমতে, হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে মাত্র ৭৭ জন। এদিকে নৌ পথের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত ২ দিনে ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে এসেছে প্রায় ৫ হাজার মানুষ।
সরকারি নিষেধাজ্ঞায় নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ায় চিন্তার বাঁঝ পরেছে সন্দ্বীপের মানুষের। সন্দ্বীপের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোটা চট্টগ্রাম শহর নির্ভর। প্রসূতি রোগীদের নিয়ে টেনশন সবচেয়ে বেশি। রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হলে চট্টগ্রাম নিয়ে যেতে হয়।
ইতোমধ্যে সরকারের নির্দেশে উপকূলীয় অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সাথে মাঠ প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য মাঠে নেমেছে নৌ বাহিনী।তারা সন্দ্বীপের রাস্তায় টহল দিয়ে করোনা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে
নৌযান শহরের সাথে যোগাযোগের প্রধান তম বাহন হওয়াই মানুষের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। জরুরী কোন স্বাস্থ্যসেবা নিতে হলে কি করবেন সে উপায় খোঁচ্ছে মানুষ কারণ সরকারের নির্দেশে নৌযান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ।
এ বিষয়ে সাউথ সন্দ্বীপ কলেজের প্রভাষক অনিক কর পাপ্পু তার ফেইসবুকে লিখেছেন, ইমার্জেন্সি চিকিৎসার জন্যে চট্টগ্রামে যারা যাবে তাদের জন্যে যেন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। বেশিরভাগের জন্যেই সম্ভব নয় একটা স্পীড বোটের পুরো ভাড়া দিয়ে শহরে যাওয়া।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে বিবেচনার অনুরোধ করছি।
সন্দ্বীপ বাসী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে শহরের উপর নির্ভরশীল– এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলুল করিম বলেন, সন্দ্বীপে করোনা পরীক্ষার কীট নেই। আমরা কাউকে সন্দেহ করলে ফৌজদারহাটে রেফার করবো। বিশেষ প্রয়োজনে রোগীকে চট্টগ্রাম নেয়ার জন্য নৌপথে প্রশাসন সহযোগীতা করবে। ৭৭ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। গত ২ দিনে ঢাকা – চট্টগ্রাম থেকে যারা এসেছে তাদেরও হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক। আমরা হারামিয়া ২০ শয্যা হাসপাতালে ৫ টি আইসোলেশান বেড রেখেছি।
সম্মিলিত সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি বলেন, সন্দ্বীপের যাতায়াত ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে সন্দ্বীপে করোনা সনাক্তের কীট আনা দরকার ছিল। এ বিষয়ে প্রশাসন একটু চেষ্টা করলে সম্ভব বলে মনে করি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বোধি চাকমা বলেন, প্রসূতি রোগীকে চট্টগ্রাম নেয়ার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা করে দিব।
Leave a Reply