সন্তানের জন্য মা করতে পারেন না পৃথিবীতে এমন কোনও কাজ নেই। এই কথার প্রমাণ দিলেন তেলেঙ্গানার এক মা। লকডাউনের মধ্যে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে তেলেঙ্গানা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ গিয়ে তিন দিন গাড়ি চালিয়ে ১৪০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেন।
স্থানীয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে তেলেঙ্গানার বাসিন্দা রাজিয়া বেগম (৪৮) ছেলেকে বাড়ি ফেরাতে এক কঠিন যাত্রার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন।
সোমবার তিনি স্কুটি নিয়ে ছেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দীর্ঘ ১৪০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এক যুদ্ধ জয় করে বুধবার সকালে ছেলেকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। মা তো বটেই সেই সঙ্গে এই যাত্রায় তিনি তাঁর অসীম ধৈর্য ক্ষমতার প্রমাণ দিলেন।
সেই সাহসী মা এই যাত্রার পর সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, “একটি মহিলার পক্ষে একটি ছোট্ট দু-চাকার গাড়ি নিয়ে যাত্রা ছিল কঠিন । তবে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনার দৃঢ় সংকল্প আমার সমস্ত ভয়কে ছাপিয়ে গিয়েছিল। আমি রুটি প্যাক করেছিলাম এবং তাঁরা আমাকে গাড়ি চালিয়ে যেতে দিয়েছিল। রাতে কোনও ট্র্যাফিক না থাকায় ও লোকজন চলাচল না করায় থাকায় কিছুটা ভয় ছিল।”
তিনি আরও জানিয়েছেন মাঝে মাঝে ১০-১৫ মিনিট করে বিরতি নিয়ে নিয়ে যাত্রা করতে থাকেন। রাজিয়া বেগম তাঁর এলাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে নিজামবাদ জেলার বোধন শহরে সরকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা। ১৫ বছর আগে স্বামী হারা রাজিয়ার দুই ছেলে। একজন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট এবং ১৯ বছর বয়সী নিজামুদ্দিন। নিজামুদ্দিন জানিয়েছেন সে এমবিবিএস পড়তে চায় অর্থাৎ ডাক্তার হতে আগ্রহী সে।
রাজিয়ার ছেলে তাঁর বন্ধুকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১২ মার্চ নেল্লোর জেলার রহমতবাদে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই তিনি থেকে যান। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হলে তিনি আর ফিরে আসতে পারেননি।
রাজিয়া যখন শুনেছিলেন তাঁর ছেলে বাড়ি ফেরার জন্য ও পরিবারের সঙ্গে যোগদান করাতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল তখন তাঁর আক্ষেপ হয়। ছেলের মুখে বাড়ি ফেরার কথা শুনেই ছেলেকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রাজিয়া তাঁর বড় ছেলেকে পাঠাননি কারণ তিনি ভেবেছিলেন যদি কোনও পুলিশ তাঁর ছেলেকে ভুল করে আটকে দেয়। সব কিছু ভুলে ছেলের জন্য তাই তিনি নিজেই উদ্দ্যোগ নিয়ে পাড়ি দেন ১৪০০ কিলোমিটার পথ। জয়রাইডারের জন্য ভুল করে তাকে আটক করতে পারে।
সন্তানের জন্য মায়ের এই কঠিন লড়াইয়ের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসা মাত্রই নেটিজেন সহ সকলেই এই মা কে কুর্নিশ জানিয়েছেন। ছেলের প্রতি মায়ের ভালোবাসা আরও এক দৃষ্টান্ত গড়ল।
Leave a Reply