গ্রেফতার দুইজন নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য: মনিরুল ইসলাম

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় ‘নব্য জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশে’র (জেএমবি) সন্দেহভাজন দুই সদস্যকে আটক করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

এর আগে আরেকটি অভিযানে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে জঙ্গি হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল।

তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করেছিল, সেখানে পাওয়া বোমা ও বিস্ফোরকের সঙ্গে রাজধানীতে পুলিশের ওপর হামলার বিস্ফোরণের উপকরণের মিল রয়েছে।

গ্রেফতারা হলেন, মোঃ মেহেদী হাসান তামিম ও মোঃ আবদুল্লাহ আজমির। গ্রেফতারের পর তাদের হেফাজত থেকে একটি ল্যাপটপ ও তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এ সংক্রান্ত সোমবার সকাল ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের ব্রিফ কালে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার দুইজন নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য। তারা উভয়েই খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তারা ভোলার একটি দুর্গম চরে প্রশিক্ষণ নেয়। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ হতে আটক ফরিদ উদ্দিন রুমির ছোট ভাই জামাল উদ্দিন রফিকের নেতৃত্বে একটি সামরিক শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। এ লক্ষ্যে গ্রেফতাররা ফতুল্লা থানাধীন রফিকের বাসায় বোমা তৈরির একটি কারখানা করে। তারা পরস্পর যোগসাজসে তৈরিকৃত বোমায় গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে এবং ৩১ আগস্ট সাইন্সল্যাবে বোমা হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। এছাড়া মালিবাগ, পল্টন ও খামার বাড়ির বোমা হামলায় ব্যবহৃত বোমা তৈরিতে বন্ধু রফিককে সহায়তা করেন।

তিনি আরো বলেন- গ্রেফতাররা জানায় যে, তাদের পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বেই সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপর বোমা হামলা করা হয়েছে।

অতি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার তক্কার মোড়ে পরিচালিত জঙ্গি বিরোধী অভিযানস্থলে তারা নিয়মিত শলাপরামর্শ করাসহ বিভিন্ন ধরনের বোমার উৎকর্ষ সাধনে তৎপর ছিল। তাদের অন্যান্য সহযোগিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতার দুইজনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত ৩১ আগস্ট সায়েন্স ল্যাবরেটরি ক্রসিংয়ে বোমা বিস্ফোরণে পুলিশের দুজন সদস্য আহত হন। এ ঘটনার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিবৃতি দেয় বলে আন্তর্জাতিক জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্ট গ্রুপ দাবি করেছিল।

এর আগে ২৯ এপ্রিল ও ২৬ মে যথাক্রমে মালিবাগ ও গুলিস্তানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন ট্রাফিক পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।

এরপরই এ ঘটনায় সম্পৃক্ত সন্দেহে ঢাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। পরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকার দুটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রকৌশলীসহ মোট তিনজনকে আটক করা হয়েছিল।

তাঁরা হলেন ঢাকার আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল এবং প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন রুমি (২৭) ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক জামালউদ্দিন রফিক (২৫) এবং রুমির স্ত্রী অগ্রণী ব্যাংকের কর্মী জান্নাতুল ফুয়ারা অনু (২০)।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *