চট্টগ্রামের দু’টি হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত করায় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠিতে সুজনের অভিনন্দন

চট্টগ্রামের করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য দুইটি প্রাইভেট হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করেছে সরকার।

এছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তারই আলোকে আজ শনিবার (৩০ মে) প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ফ্যাক্স ও ইমেইল বার্তা প্রেরণ করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

নিম্নে সুজনের বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

তাং- ৩০/০৫/২০২০ইং

বরাবর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

বিষয়ঃ- চট্টগ্রাম’র দু’টি প্রাইভেট হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত করায় অভিনন্দন।

আসসালামু আলাইকুম,

ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই চট্টগ্রাম শহরের সাথে আপনার এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিবিড় আবেগ এবং অনুভূতি জড়িত। আপনি ক্ষমতায় এসেই এই শহরের উন্নয়নের দায়িত্বভার কাঁধে নিয়েছিলেন। আজ করোনাকালে যখন সারাদেশের মানুষ জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে লড়ে যাচ্ছে এই দুঃসময়ে আপনি চট্টগ্রামের মানুষের কথা ভোলেননি তাই আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

দেখা যাচ্ছে, বরাবরই আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যেসকল নির্দেশনা দেওয়া হয় চট্টগ্রামে কেন যেন কে বা কারা পেছন থেকে কলকাটি নেড়ে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন হতে দেয় না। ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, ডিজি (হেলথ) এর সাথে ১২টি বেসরকারি হাসপাতালের চুক্তি হয়েছিল যে তারা প্রত্যেকটি হাসপাতালে ১০টি করে করোনা বেড এবং ৩টি আইসিইউ করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ দিবেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি যার কারণে অনেক রোগী শুধুমাত্র আইসিইউ সুবিধার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশে রাষ্ট্রের চেয়েও শক্তিশালী এরা কারা? করোনা সংক্রমন শুরু হওয়ার পর বৃতত্তর চট্টগ্রামের জন্য ফৌজদারহাট বি আই টি ডিতে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আর জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হয়। পরবর্তীতে জেনারেল হাসপাতালে ১০টি ভেন্টিলেশন সহ আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্টি চালু হওয়ার পর হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রোগীর সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল হয়ে পড়ে। এবং দিন যাওয়ার সাথে সাথে ক্রিটিকাল রোগীর সংখ্যা এত বেড়ে গেলো যে কোন রোগী মারা গেলে তাকে কবর দেওয়ার পর বেড খালি হলে তবেই বেডে অন্য রোগী ঢুকানো হচ্ছে। এর আগে প্রয়োজন হলেও ঢুকানো সম্ভব হয়নি ভেন্টিলেশনের অপ্রতুলতার কারনে। চট্টগ্রামের অনেক মানুষ শুধুমাত্র ভেন্টিলেশনের অভাবে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষের এই সংকটকে উপলব্ধি করে আরো দুইটি বিশেষায়িত হাসপাতালের অনুমোদন দিয়েছেন সেজন্য আপনার প্রতি চট্টগ্রামবাসী আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

বর্তমানে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা। এই সংকট দ্রুত সমাধান করতে না পারলে চট্টগ্রামকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে। অতি জরুরি ভিত্তিতে এই সংকট সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এই সংকট সমাধানে আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। এছাড়াও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের একটি সেকশন ১০০টি বেড ও পর্যাপ্ত আইসিইউ বেডসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত করে রাখলেও ডাক্তারদের একাংশের অসহযোগিতার দরুণ তারা এটা কোনভাবেই চালু করতে পারছেন না। চট্টগ্রামে পুলিশ ও র‌্যাবের অনেক ভাইয়েরা করোনা সংক্রমিত হয়েছে এবং অনেকে মৃত্যুবরণও করেছেন। ঢাকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য যেমন আলাদা পাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিক তেমনি মা ও শিশু হাসপাতালকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাইদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে, কেননা এটা করোনার চিকিৎসা দেওয়ার জন্য একটা রেডি হাসপাতাল শুধু দরকার আমাদের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সহযোগীতা।
এছাড়াও আমাদের রেলওয়ে হাসপাতাল অনেক বড় একটা হাসপাতাল। এই হাসপাতালটিও করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বন্দরেও বিশাল হাসপাতাল স্থাপনা পড়ে রয়েছে, সেখানে কোন লোককে তারা চিকিৎসা দেয় না। অথচ চট্টগ্রামের মানুষের পৈতৃক ভিটা-মাটির উপর এই চট্টগ্রাম বন্দর অবস্থিত। যদি এই দুর্দিনে মানুষের সেবায় তারা এগিয়ে না আসে তাহলে মানুষের মনে কষ্ট থেকে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যদি আপনার পরামর্শক্রমে এবং নির্দেশক্রমে এই হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমরা আপনার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
এছাড়াও ভাটিয়ারীতে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের বিশাল হাসপাতাল স্থাপনা আছে। তাদের প্রচুর ফান্ড ও আছে। জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বি আই টি আই ডি এর যেসব রোগী অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থায় আছেন তাদেরকে সেখানে স্থানান্তর করা যেতে পারে। সুতরাং এই হাসপাতালটিকেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি সেদিন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমাদের জীবনও চালাতে হবে, সাথে সাথে আমাদের সংক্রমিত রোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাও করতে হবে’। এই দুর্যোগকালীন সময়ে আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং নির্দেশনা আমরা প্রত্যাশা করি। মহান আল্লাহ তা’লা আপনাকে দীর্ঘ হায়াত দিক, সুস্থতা দিক, এই জাতির আরো বেশি খেদমত করার সুযোগ আল্লাহ আপনাকে করে দিক। বীর চট্টলার লাখো-কোটি মানুষের দু’আ আপনার এবং আপনার সরকারের সাথে আছে।
আমি আবারো বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা বাস্তবায়নে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে চট্টলাবাসীর পক্ষ থেকে জানাই হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদ
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু

বিনীত
আপনারই একান্ত অনুগত

(খোরশেদ আলম সুজন)
সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, চট্টগ্রাম মহানগর।
১০নং ওয়ার্ড, উত্তর কাট্টলী, থানা-পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মোবাইল নং- ০১৭১৩ – ১১০ ৮৪৬

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *