সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনা হলনা মারুফের,নবজাতক শিশু হারালো পিতা/করোনা উপসর্গে মৃত্যু

মারুফ চৌধুরী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে

২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। রাজীব সেন প্রিন্স : মাত্র বছর দেড়েক আগে সামাজিক ভাবে ঝাকজমকপূর্ণ আয়োজনে বিয়ের পিড়িতে বসেছিলেন মারুফ চৌধুরী। চট্টগ্রাম আদালতে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে প্রাকটিস করতেন তিনি।

গেল ঈদের আগের দিন তাদের সংসারে ঘর আলো করে আসে ফুটফুটে এক বেবি। তবে বাবা হওয়ার আনন্দটা সে খুব একটা বেশি সময় উদযাপন করতে পারেনি। এরমাঝেই তার শরীরে দানা বাধে করোনার সব উপসর্গ।

নবজাতক কণ্যা সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনার লোভ ছিলো তার। আর তাই করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে চেয়েছে মারুফ। এজন্য করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য নমুনা দিতে বেশ কয়েকটি ল্যাবে ছুটোছুটিও করেছেন নিজেই। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা করাতে ব্যর্থ হন।

এর মাঝেই তার শ্বাসকষ্ট অতিরিক্ত বেড়ে গেলে গত ১ জুন সে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিণ্ডার কিনে নিয়ে শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণা মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে।

এরপরও মারুফের শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে গত ২ জুন স্বজনরা তাকে প্রথমে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কোন সিট খালি না পেয়ে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। দীর্ঘসময় পর সেখানে ভর্তি করা হলেও সিট পাননি।

৩ জুন দিবাগত রাতে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পারি জমান তরুণ এ শিক্ষানবিশ আইনজীবী। নবজাতক কণ্যা সন্তানের বাবা ডাকটা তার আর শোনা হলনা, নবজাতক শিশুটি হারালো পিতা।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া তার ছোট ভাইয়ের বন্ধু আবু তাহের ৩ জুন রাত সাড়ে ৯টার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করে সেখানে উল্লেখ করেন, মারুফ চৌধুরী। ইউনিভার্সিটি সহপাঠীর বড় ভাই। বছর দেড়েক আগে বিয়ে করেছিলেন। ওনার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে শেষবার দেখা হয়েছিল। ঈদের আগের দিন ফুটফুটে বেবিটার বাবা হয়েছেন।

কিন্তু বাবা ডাক না শোনার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। বুধবার (৩ জুন) করোনার উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসা পাননি অভিযোগও করেন ফেসবুক পোস্টে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চোখের সামনে এভাবে অনেকে আপনজন হারাচ্ছেন। পর্যাপ্ত টেষ্টের অভাব, পর্যাপ্ত হাসপাতালের অভাব, পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে এভাবে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

ওদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। আল্লাহ যেন মারুফ ভাইকে জান্নাত নসিব করে। আমাদেরকে এই মাহামারি থেকে হেফাজত করুন।

করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া শিক্ষানবিশ আইনজীবীর চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সহকর্মী আইনজীবী বরকত উল্লাহ খান বলেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তির পর মারুফের মৃত্যু হয়। সে শেষবারের মতো আদালতে গিয়েছিলেন গত ২৫ মার্চ। তখন তার সাথে দেখা হয়েছিলো।

কখনো ভাবিনি সহপাঠিটি এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। আল্লাহ যে তার পরিবারকে এ শোক সইবার শক্তি দিন। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

তার কলেজ জীবনের বন্ধু সরওয়ার সিহাব ফেসবুকে আবু তাহেরের পোস্টে কমেন্ট করে লিখেছেন, ২০১০ সালে আমি যখন মহসিন কলেজে পড়তাম তখন উনি আমার রুমমেট ছিলেন। চাকরি করতেন গোল পাহাড় মোড়ের মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

আজকে হঠাৎ উনার মৃত্যুর খবর শুনে অনেকক্ষণ স্তব্ধ ছিলাম। আল্লাহ বেহেশত নসীব করুক। আমিন।

২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *