বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও বাজেট ভাবনা নিয়ে ভার্চুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠিত

চলতি জুন মাসে আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে শনিবার (৬ জুন) রাতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের রয়্যাল ইকোনোমিকস ক্লাব(REC)- কর্তৃক আয়োজিত “কোভিড-১৯ মহামারীঃ বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও বাজেট ভাবনা” শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত ভার্চুয়াল সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস. এম. ওয়াহিদ মুরাদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে রয়্যাল ইকোনোমিকস ক্লাবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় ভৌমিক।

বাজেট বিষয়ে ভাবনা নিয়ে এ আলোচনায় নানাবিধ তথ্য উঠে এসেছে। বাজেট ভাবনা নিয়ে অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের অগ্রাধিকারের জায়গা হতে হবে স্বাস্থ্য খাতে।

প্রত্যেকেই একমত যে, যদি জীবনকে বাঁচাতে পারি, তবে জীবিকাকেও রক্ষা করা যাবে।”

এছাড়াও তিনি সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর দিকেও জোর দিয়েছেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, “এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ ৪টি।
১.বাজেটটা হতে যাচ্ছে কোভিড-১৯ এর কোন খাতে কি অভিঘাত হয়েছে তার মূল্যায়ন ব্যতিরেকে একটা অন্ধকারের ভেতর।
২.যেহেতু মূল্যায়ন নেই,সেহেতু আগের বাজেটের সাথে যে মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা থাকে,তার বেইসমেন্ট এখন খুব জটিল অবস্থায় আছে।
৩. ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পুরো কনসেপ্ট তছনছ করে দিয়েছে কোভিড-১৯।
৪.বাংলাদেশের উন্নয়ন উপাখ্যান প্রবৃদ্ধি নির্ভর,প্রবৃদ্ধির ধারণা নির্ভর বাজেট হলে আমরা আবারও গতানুগতিকতার দিকে ফিরে যাবো।”

তিনি আরও বলেন “করোনা ভাইরাস আমাদের বিভিন্ন খাতের দূর্বলতাগুলো ধরিয়ে দিয়েছে; এখন আমাদের উচিত হবে এবারের বাজেটে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”

অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, “বাজেটে সাংবিধানিক কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা আমাদের মানতে হবে। ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আমাদের ভিন্ন ভাবে ভাবতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ লকডাউনে দেয়া যাবে না, কারন কাজ হারিয়েছে অনেকেই। ইতোমধ্যে দারিদ্র্যতার হার বেড়েছে। এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও কাজের আওতায় আনতে হবে। আমাদের এবারের বাজেট মূল্যায়িত হবে- আমাদের জীবন কতটা নিরাপদ করতে পারলাম, প্রণোদনার বাস্তবায়ন কতটুকু হলো এবং বাজার ব্যবস্থা কি পরিমান চালু রাখতে পারলাম এসবের উপর। বাজেটের মূল কৌশল হবে ওই মার্চে ইকোনোমিকে যে অবস্থায় রেখে এসেছি সে অবস্থায় ফিরে পাওয়া। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকার ভূমিকা পালন করেছে এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতেও বরাদ্দ বাড়বে এবারের বাজেটে। এ (মন্দাকালীন) বছরের সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে বলেই বাজেট ঘাটতি বাড়াতে হবে। মন্দা মোকাবেলায় মনিটারি পলিসি জোরদার রাখতে হবে আমাদের।”

তিনি আরও বলেন, করোনায় মৃত্যুর থেকে খাদ্যাভাবে মৃত্যু বেশি পীড়াদায়ক! স্থানিক ও সংক্রমণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা কার্যকরী পদক্ষেপ নেবো। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বাড়ানোর সর্বোচ্চ প্রয়াস চালানো আমাদের লক্ষ্য এবং সর্বোপরি বরাদ্দের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোতে নজর দিতে হবে।

উক্ত অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে অতিথিবৃন্দ, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন ।

এক প্রশ্নের জবাবে গার্মেন্টস খাতে প্রণোদনা সত্ত্বেও কর্মী ছাঁটাই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. আলম বলেন, “হুট করে কর্মী ছাঁটাই শ্রমিক কল্যাণ আইনে আসলে সম্ভব নয়। নোটিশ দিতে হবে এবং যথোপযুক্ত নিয়ম মেনে তবেই সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকারের আগ্রহের কমতি নেই। প্রণোদনার সুযোগ পেয়েছে বলে গার্মেন্টস সেক্টরের বিষয়টা ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিৎ।”

একই প্রসঙ্গে ড. শাহাদাত যোগ করেন, “সেইফটি এন্ড সিক্যুরিটি অফ দ্যা জব নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। এত বড় একটা সেক্টরকে আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না তাও ভেবে দেখতে হবে।”

বাজেটে আয় বৈষম্য কমানোর জন্য উচ্চসম্পদশালীদের উপর সম্পদ কর আরোপের জন্য কি ব্যবস্থা নেয়া উচিত কিনা, প্রশ্নের জবাবে ড.ভট্টাচার্য বলেন, “প্রবৃদ্ধি ও বন্টনের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধের নিষ্পত্তি হয় এর ট্রেড অফ আসলে কার্যকর হয় উন্নয়ন অর্থনীতিতে। সম্পদের উপর কর আরোপ না করে সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা যায়না।”

এ আলোচনায় শিক্ষার্থীদের জন্য দিকনির্দেশনাও প্রদান করেন অতিথিবৃন্দ।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র গ্রেডের পিছনে না দৌড়ে, সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথেও নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে!”

ড. শাহাদাত সিদ্দিকী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “নিজে ভালো থাকুন, দেশকে ভালো রাখুন।”

পরিশেষে, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক, নোবিপ্রবি‘র অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, বাংলাদেশের আয় বৈষম্য কমে গিয়ে আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে; অর্থাৎ এখন এটা ইংরেজি বর্ণ ‘N‘ -এর মত। তাছাড়া কোভিড-১৯-এর প্রভাবে দারিদ্রের হারও প্রায় দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। বেকারত্বের হারও অনেক বেড়ে গিয়েছে। এজন্য তিনি বাজেটে আনুষ্ঠানিক খাতের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতকেও প্রণোদনার আওতায় আনার সুপারিশ করেন।

২৪ ঘণ্টা/এম আর/অনামিকা

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *