মানবপাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করেছে কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট সিআইডি।
রোববার (৭ জুন) বিকেলে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তার বিরুদ্ধে মানবপাচারের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার কারবারের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সময় শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুয়েতের মাশরিফ আবাসিক এলাকায় নিজ বাসভবন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কুয়েতের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম ফোনে গণমাধ্যমকে জানান, কুয়েতের সিআইডি তাকে গ্রেফতার করেছে। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসকে এখন পর্যন্ত কোন তথ্য দেয়া হয় নি। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কিনা খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর কুয়েতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দেশের শতাধিক নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। শহীদ ইসলামের নামও ওই তালিকায় ছিল। কুয়েতে তার বড় আকারের ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে বলে জানা যায়।
এমপি শহীদ আলম গত মার্চ থেকেই কুয়েতে অবস্থান করছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কিত খবর বের হয়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, অবৈধ ভিসা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশী এক সংসদ সদস্যকে খুঁজছে কুয়েতের নিরাপত্তা সংস্থা।
খবরে আরো বলা হয়, অভিবাসী শ্রমিক আনার সরকারি ঠিকাদারি পেতে তিনি সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়েছেন।
স্থানীয় পত্রিকা আল কাবাস কুয়েতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে এক বাংলাদেশীকে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। তবে তার পরিচয় জানাননি তিনি। শুধু তিনি বলেন, তিন জনের একটি গ্যাং এ কাজ করে। বাকি দুজন দেশ থেকে পালিয়েছে। এরা তিনজনই তিনটি বড় কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তারা বাংলাদেশ থেকে ২০ হাজারেও বেশি শ্রমিক কুয়েতে পাচার করেছেন। বিনিময়ে সব মিলিয়ে ৫ কোটি দিনারেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আটক ওই বাংলাদেশীই জিজ্ঞাসাবাদে লক্ষ্মীপুরের এমপির নাম বলেছেন বলে জানায় পত্রিকাটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারাফি কুয়েত গ্রুপের একজন অংশীদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিই্ও) শহীদ ইসলাম। এ প্রতিষ্ঠানটির কুয়েত ছাড়াও ওমান ও জর্ডানে কার্যক্রম রয়েছে।
শহীদ ইসলাম প্রথম কুয়েত যান ১৯৯২ সালে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ভেক্টর মার্কেটিংয়ে যোগ দেয়ার পরই সেখানে যান তিনি। এরপর তিনি মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানিতে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন, পরে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হন। এ কোম্পানির ভারী যন্ত্রপাতি, সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রকৌশল থেকে শুরু করে মানবসম্পদ সহায়তা সেবাসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।
এ ছাড়া তিনি বেসরকারি খাতের ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানির চেয়ারম্যান। স্বতন্ত্র এই সংসদ আওয়ামী লীগ কুয়েতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য, বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
Leave a Reply