মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল করে করোনা ইউনিটে রোগীর সেবা করার আগ্রহ ডা. মাহমুদা আফরোজা’র

মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল করেছেন ডা. মাহমুদা আফরোজা

২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত নবীন চিকিৎসক মাহমুদা সুলতানা আফরোজা।

স্বামী ম. মাহমুদুর রহমান শাওন। তিনি একজন সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী। তাদের কোল জুড়ে ফুটফুটে এক সন্তান এসেছে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি।

এ দম্পত্তির সদ্যজাত পুত্র সন্তানের নাম রেখেছেন আজমাইন রহমান জেইন। সন্তান জন্মগ্রহণের পর থেকে নবীন এ চিকিৎসক ছিলেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।

মায়ের আদর স্নেহ ও ভালবাসায় দেখতে দেখতে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটির বয়স এখন চার মাস পেরিয়ে গেছে। এরপরও সময়টা মায়ের বুকের দুধই একমাত্র সন্তানের খাবার। আর বেড়ে উঠতে প্রতিমুহুত্বে চাই মায়ের মমতা, আদর আর পরশ।

তবে সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে একজন মা হিসেবে নয় বরং একজন চিকিৎসক হিসেবে একাধিক মায়ের প্রাণ রক্ষার্তে ছুটে যেতে চান পেশায়। বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে নিজের মমতাময়ী সন্তানের কথা ভুলে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল চেয়ে আবেদন করেছে নিজ কর্মস্থলের হাসপাতালে।

শুধ তাই নয়, হাসপাতালে নতুন করে প্রস্তুত করা করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের চিকিৎসার আগ্রহ প্রকাশ করেন ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা। তার এই আবেদনের ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ইতস্ততবোধ করলেও পরে ওই চিকিৎসকের আগ্রহের কারণে আবেদন গ্রহণ করেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন। ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন।

কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর এ কঠিন সময়ে একের পর এক নার্স ও চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সংকট দেখা দিয়েছে।

ঠিক এমন সময়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিলের আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা।

তথ্যটি নিশ্চিত করে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির ট্রেজারার রেজাউল করিম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল করে করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের সেবা করার আগ্রহ প্রকাশ করে কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে চিকিৎসক আফরোজা।

বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজের সন্তানকে রেখে ঝুঁকি নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে কাজ করাটা অনেক বড় বিষয়। উন্নত মানসিকতা লালন করেন বলেই তিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। সাধুবাদ জানাই এ সিদ্ধান্তকে। ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজার বিষয়টি দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবেন।

এ ব্যাপারে ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে স্তব্ধ চারিদিক। ঘরবন্দি মানুষ। চারিদিকে করোনা আতঙ্ক। সাধারণ মানুষের অভিযোগ এমন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন না সাধারণ রোগীও।

বৈশ্বিক মহামারিতে একজন চিকিৎসক হিসাবে ঘরে বসে থাকাটা সমীচীন মনে করছি না। চিকিৎসা না দিলে নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে। বিবেকের তাড়ানায় আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি বলেন, এমন কঠিন মুহূর্তে করোনাকালীন সময়ে চিকিৎসক সংকট আছে। তাই রেগীদের চিকিৎসা না দিয়ে ঘরে বসে থাকা সম্ভব না। ফলে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল করে করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের সেবা করার চিন্তা থেকেই পারিবারিকভাবেই আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *