করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা জেনেও যারা জেগেও ঘুমিয়ে আছে তারাই বড় সমস্যা:চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন রেডজোন চিহ্নিত এলাকায় লকডাউন কার্যকর করণে সক্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদের যুদ্ধের ময়দানের পদাতিক যোদ্ধা হিসেবে অবহিত করে বলেন, অদৃশ্য শত্রু ও মরণঘাতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীব করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে মানুষকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে প্রশিক্ষিত ও সুশৃংখল স্বেচ্ছাসেবকরাই প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সহায়ক শক্তি।

আজ সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আইইডিসিআর ও সিভিল সার্জন চট্টগ্রাম এর সহযোগিতায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট হলে অনুষ্ঠিত রেডজোন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের কোভিড-১৯ কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং সংক্রান্ত ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি চলমান ক্রমঅবনতিশীল করোনার সামাজিক সংক্রমণ পরিস্থিতির মারাত্মক প্রভাব ও এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করে বলেন, আমরা একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা জানি। এ পরিস্থিতি প্রত্যেকের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিজের সুরক্ষা নিজেরই হাতে। এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাকে অনেকেই আমলে আনছেন না। এই উদাসিনতাও একটি মারাত্মক ব্যাধি। যারা জেগে ঘুমায় তাদের জাগানো যায় না। এই আত্মঘাতি ঘুমের ভান স্বেচ্ছাসেবকরাই ভাঙ্গাতে পারেন।

তিনি একাজটি করতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাদেরকে সংক্রমণ প্রবণ এলাকায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারের কাছে শারীরিকভাবে সরাসরি যেতে হবে না। এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে। রোগী যেখানেই থাকুক দুর থেকে মোবাইল বা ভিডিও কলে রোগীর স্বাস্থ্য অবস্থা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা,ওষুধপত্র ও চাহিদা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া যাবে। সুতরাং স্বেচ্ছাসেবক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তার ঝুঁকির বিন্দুমাত্র আশংকার অবকাশ নেই।

সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা অবলম্বন ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জীবনতো সবার আগে এবং তা কখনো থেমে থাকে না। জীবন থাকলে জীবিকার কথা চলে আসে। তাই জীবন ও জীবিকার সমন্বয় করে কাজ করতে হচ্ছে এবং সারা বিশ্ব তাই করছে। যারা খেটে খাওয়া মানুষ দিনে রুজি করে দিনে খায় এদেরতো সঞ্চয় ও সম্পদ বলতে কিছুই নেই। তারা যদি ক্ষুধায় মারা যান- এটাও হত্যার সামিল এবং তা আমরা কিছুতেই করতে পারি না। তবে লকডাউন কোথায় কিভাবে-কখন হবে এবং সংক্রমেণের হার প্রবণ এলাকা সু-নির্দ্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে শুধু সেখানে তা প্রয়োগ করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হচ্ছে।

তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলাই পজেটিভ ক্যাম্পেইন পাওয়ার হিসেবে অবিহিত করে বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্বের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। আমদেরও ছিল না। তাই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে সে সম্পর্কে ধারানাও ছিল না। শুরুতেই কোন কোন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ও সমন্বয়হীনতা ছিল। এসব নিয়ে সমালোচনা থাকতে পারে, তবে পরামর্শও থাকতে হবে। তাই কখন-কোথায়-কী ভুল হয়েছে, কেন হয়েছে সে কথা বার বার না লিখে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়, কী করা যায় সেই পরামর্শ ও পথ বাতলে দিলে আমরা অবশ্যই গ্রহণ করবো।

তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠিত সিটি হল কোভিড আইসোলেশন সেন্টারটিকে সর্ববৃহৎ করোনা চিকিৎসালয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এখান থেকেই করোনা আক্রান্তরা যাতে সহজলভ্য সু-চিকিৎসা পান সেভাবেই এই সেন্টারটির অবকাঠামো তৈরী সহ চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক, নার্স সহ প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং অক্সিজেনের পর্যাপ্ততা,সেন্ট্রাল এসি ব্যবস্থা, ওয়াইফাই সুবিধা সংযোজিত করা হয়েছে। এছাড়াও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা, ওষুধপত্র, খাবার ব্যয় সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্বাহ করা হবে।

আজকে থেকেই কোভিড আইসোলেশন সেন্টারে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে যে সমস্ত রোগীর নিজেদের ঘরে আইসোলেশনে থাকার সুযোগ নেই তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এই আইসোলেশন সেন্টারটিতে নন-কোভিড রোগীদেরও প্রয়োজনীয় জরুরী চিকিৎসা দিয়ে পরে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত এই আইসোলেশন সেন্টারটি চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি কার্যকর ও আশাজাগানিয়া উদ্যোগ হিসেবে সকলের গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে। এই সেন্টারটিকে পর্যায়ক্রমে অত্যাধুনিক ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।

সভাপতির ভাষনে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, রেডজোন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের কোভিড-১৯ কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং সংক্রান্ত ওরিয়েন্টেশন কর্মশালার এই কাজটি করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তবুও নাগরিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতায় এই কর্মশালাটি হচ্ছে বিধায় এর একটি ইতিবাচক প্রভাব সমাজে প্রতিফলিত হবে।

যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এই মানবিক কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যে দায়িত্ব পালন করছেন এথেকে আপনাদের কাছে সমাজ ঋণী হয়ে থাকবে। এটা পেশা না হলেও একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। শুধু করোনাকালে নয় আপনাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা সকল ধরনের দূর্যোগ মোকাবেলায় জাতিকে আশার আলো দেখাবে।

দিনব্যাপী এই কর্মশালায় ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন।

কর্মশলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর ড.নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু, শৈবাল দাশ সুমন, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম,চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, কর্মশালার আইইডিসিআর এর প্রশিক্ষক ডা. মোহাম্মদ ওমর কাইয়ুম, ডা:তৌহিদুল আনোয়ার প্রমুখ।

চসিকের রাজস্ব কর বাবদ ১০ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা দিল রেলওয়ে
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের বকেয়া রাজস্ব কর বাবদ ১০ কোটি ৪১ লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর করছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বরাবরে।

আজ বিকেল চসিক মেয়র দপ্তরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মফিদুল আলম ১০ কোটি ৪১ লক্ষ টাকার এই চেক মেয়র বরাবরে হস্তান্তর করেন।

এসময় বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল জোন থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কে বকেয়া কর প্রদান, করেন, মহিউদ্দিন আহমেদ, কর কর্মকর্তা সরোয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

চেক গ্রহণ করে সিটি মেয়র রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সের উপর চসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হয়। সময়মত কর পরিশোধ করে রেলওয়ে চসিকের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সাথী হলেন।
২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *