ইসলাম ধর্ম, হযরত মুহাম্মদ (স.) ও আল্লাহকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর কটুক্তি করার পর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা বৌদ্ধ রাজ্য বানানোর ঘোষণা দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা বৌদ্ধ ভিক্ষু শরণঙ্কর থের’কে রাঙ্গুনিয়ায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে।
বিতর্কিত এই বৌদ্ধ ভিক্ষুকে রাঙ্গুনিয়ার যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলার সম্মিলিত আলেম ওলামা পরিষদ ও স্থানীয় জনতা।
হযরত মুহাম্মদ (স.) ও আল্লাহকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর কটুক্তি করায় সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর ইছাখালীতে শরণঙ্কর থের নামের এই বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গ্রেফতারের দাবীতে আয়োজিত মানববন্ধনে এই ঘোষণা দেয়া হয়। মানববন্ধনে কয়েক শতাধিক আলেম-ওলামা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রাঙ্গুনিয়ার রাহাতিয়া দরবারের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ওবাইদুল মোস্তফা নঈমী, রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল মাবুদ, মাওলানা মোহাম্মদ হাছান, আ.ন.ম. নাজমুল হোসাইন নঈমী, মাওলানা সৈয়দ আইয়ুব নূরী, মাওলানা নুরুল আজিম, মাওলানা দিলদার বিন কাশেম, নাজমুল হক চৌধুরী, গাউছিয়া কমিটির নেতা জসিম উদ্দিন শাহ, মাওলানা সৈয়দ মোকাম্মেল হক শাহ, মাওলানা ওমর ফারুক, মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, মাওলানা সিরাজ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিতর্কিত বৌদ্ধ ভিক্ষু শরণাঙ্কর থের ও তার অনুসারীরা ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সঃ) নিয়ে আপত্তিকর ও স্পর্শকাতর কটুক্তি করেছেন ফেসবুকে৷ এছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে বিভিন্ন বিবৃতিতেও উষ্কানিমূলক বক্তব্য দেন। তিনি চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা বৌদ্ধ রাজ্য বানানোর ঘোষণা দিয়ে দেশদ্রোহী দৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তার এসব অপরাধে তাকে দ্রুত গেফতার করা না হলে সারা বাংলাদেশে ব্যাপী আরও বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে।
বক্তারা আরও বলেন, রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের ফলহারিয়া গ্রামে বনবিভাগের শতাধিক একর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা জ্ঞানশরণ মহাঅরণ্য বৌদ্ধ বিহারের প্রতিষ্টাতা ধুতাঙ্গ সাধক দাবীদার শরণাঙ্কর থের বনের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করলে বাঁধা দেন বনবিভাগ ও পুলিশ। এরআগেও বনবিভাগ এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিরুদ্ধে প্রায় শতাধিক একর সংরক্ষিত বনের জায়গা দখল করার অভিযোগে ৪টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু কোনভাবেই তাকে বনের জায়গা দখল থেকে বিরত করা যাচ্ছিলনা। পুলিশ ও বনবিভাগের বাঁধার মুখে পাকা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকার পর ফেসবুক লাইভে গিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু শরণাঙ্কর থের রাঙ্গুনিয়ার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং তাদের বাড়িঘর দখল করে নিচ্ছে এধরণের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমুলক বক্তব্য পোস্ট দেন। অথচ এধরণের কোন ঘটনা রাঙ্গুনিয়ায় ঘটেনি। বৌদ্ধ ভিক্ষুর এধরণের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমুলক বক্তব্যে স্থানীয় মুসলমান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এরমধ্যে শরণঙ্কর ভিক্ষুর ছবি সম্বলিত ‘রুমন হিমু’ ও ‘রানা সাধু’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম ও হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে নানা আপত্তিকর কটুক্তি করা হয়। এতে রাঙ্গুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। পরবর্তীতে এই দুই ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন ছাত্রলীগ নেতা রাসেল রাসু।
প্রতিবাদের মুখে জ্ঞানশরণ মহাঅরণ্য বৌদ্ধ বিহার ছেড়ে পালিয়ে যান বিতর্কিত ও দেশদ্রোহী ভিক্ষু শরণঙ্কর থের।
মানববন্ধনে জানানো হয়, বিহার ছেড়ে ফেসবুক লাইভে থেকে যাবার পথে তিনি নানা আপত্তিকর কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষ তাকে খোদার মতো করে পূজা করেন।’ একপর্যায়ে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা বৌদ্ধ রাজ্য বানানোর ঘোষণা দিয়ে উপস্থিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি, আপনারা কি করবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনারা নিন।’
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বনের জায়গা দখলে বাঁধা দেয়ায় বৌদ্ধ ভিক্ষু শরণঙ্কর নানা ধরণের বিতর্ক সৃষ্টি করে ফেলেছেন। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তিকারী আাইডি দুটির ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য মাঠ পর্যায়েও পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
Leave a Reply