বিবাদমান দ্বন্দ্বের জের ধরে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. আ.কা.ম সারওয়ার জাহান বাদশার ফুপাতো ভাই হাসিনুর রহমানকে (৫০) প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার সকাল ৭টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসিনুর রহমান দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার মৃত ডা. জাকির হোসেনের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এলাকা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, কয়েকবছর আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উক্ত এলাকায় ঈদের দিন কুপিয়ে শাহাবুল নামের এক যুবককে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
শাহাবুলের হত্যার পরে দ্বন্দ্ব আরও প্রকোট রূপ নেয়।
শনিবার সকালে হাসিনুর রহমান বাজারে মাছ ক্রয় করছিলেন। এসময় পিছন দিক থেকে নিহত শাহাবুলের বাবা মজিবর রহমান (৪০) তাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এসময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন থেকে সকাল পৌনে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, একটি খুনের ঘটনা মীমাংসার মধ্যস্থতার চেষ্টা করছিলেন হাসিনুর। এর জের ধরে তাকে খুন করা হতে পারে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানায়, হাসিনুর রহমান সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাংসদের অবর্তমানে তার ব্যক্তিগত ও দলীয় কাজকর্ম হাসিনুর দেখভাল করতেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জব্বার নামে একজনের মোটরসাইকেলে চড়ে নিজ বাড়ি থেকে স্থানীয় বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় বাড়ির পাশেই একটি দোকানের কাছে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মজিবুর রহমান বয়াতি তার ওপর আচমকা হামলা চালায়।
এ সময় রমদা দিয়ে হাসিনুরের শরীরে বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকলে এক পর্যায়ে তিনি মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারী পালিয়ে যায়। আহত হন মোটরসাইকেলের চালক জব্বার আলী।
জানা গেছে, বছরখানেক আগে মজিবুর রহমান বয়াতির এক বছর বয়সী ছেলে খুন হয়। সে সময় মজিবর এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে দৌলতপুর থানায়। মামলার আসামিরা সবাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। স্থানীয়রা জানায়, সাংসদের প্রতিনিধি হিসেবে হাসিনুর রহমান এই হত্যা মামলাটি মীমাংসার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মজিবুর এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছাঁয়া নেমে আসে। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা তার বাড়িতে ভিড় করছেন। এলাকায় যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান জানান, ‘নিহত হাসিনুর রহমান সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। তিনি মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করতেন। মানুষের প্রয়োজনে পাশে থাকতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।’
দৌলতপুর থানার ওসি নিশিকান্ত জানান, ‘ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পরপরই হামলাকারী মজিবর রয়াতিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।’
২৪ ঘণ্টা/এম আর
Leave a Reply