পটিয়ায় এক পা’হীন অদম্য অটোরিকশা চালক নাজিমের দুঃখ গাথা

দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে এক পা নেই চট্টগ্রামের পটিয়ার ছনহরা ইউনিয়নের আবুল হোসেনের ছেলে নাজিম উদ্দিনের। বাবার অভাব-অনটনের সংসারে হাল ধরতে এক যুগ আগে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদে রিকশার হাতল ধরে পরিবারের দায়ভার নেয়।

সেই থেকেই ইচ্ছাশক্তি দিয়ে বাঁধাকে জয় করলেন সে। এখন রিকশায় হাতল ছেড়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিচ্ছে জীবনের।

প্রবল মনেবলের কারণে এক পা না থাকলেও নাজিমের স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালাতে অক্ষেপ নেই। দক্ষ চালক হিসেবে রয়েছে এলাকায় তার খ্যাতিও। অদম্য নাজিমের দেখাদেখি এলাকার বেকার যুবকরা উজ্জীবীত হচ্ছে।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালের দিকে বাবার সাথে কুরবানির হাট থেকে ফিরছিলেন ৯ বছর বয়সী নাজিম। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই রিকশার চাকার সাথে লুঙ্গি পেঁচিয়ে পড়ে যায় সে। এতে এক পা মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তার পক্ষাঘাতগ্রস্থ পা’টি কেটে ফেলে তাকে বাঁচিয়ে রাখে।

কিন্তু এক পা হারিয়েও তার জীবন সংগ্রাম থেমে থাকেনি। যে বাহনের কারণে তার পা হারাতে হয়েছে সে বাহনের (রিকশা) হাতল ধরে সংসারের হাত ধরে। এখন সে নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে জীবন নির্বাহ করছেন।

নাজিম উদ্দিন জানান, তিনি সাত ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ। ছোট বেলায় মা’কে হারিয়েছেন। বয়োবৃদ্ধ বাবা, বিধবা বড়বোন নিয়ে নাজিম উদ্দিন সংসারের ঘাণি টানতে গিয়ে এখন ৩২ বছর বয়সেও বিয়ে করতে পারেনি।

অভাবের সংসারে ভাড়া করা সিএনজি চালিয়ে দিনে যা আয় করে তা থেকে গাড়িভাড়ারা টাকা, সংসারের প্রত্যাহিক খরচ মিটিয়ে তেমন কিছুই থাকেনা। ফলে অসুখে-বিসুখে টাকার অভাবে তাকে হিমশিম খেতে হয়।

নাজিম উদ্দিন বলেন, একটি পা না থাকায় গাড়ি চালাতে তার কষ্ট হয়। তারপরও তার ইচ্ছে ছিল ভালো একজন চালক হবেন, ওই ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে মনের জোড়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, গ্রামীন সড়কগুলোতে সিএনজি অটোরিকশা প্রায় সময় নষ্ট হয়ে যায়। এতে তার প্রচুর কষ্ট হয়ে যায়। পা না থাকায় পথে পথে না বিপত্তিতো রয়েছে। তারপরও কি করা। এতো কষ্ট করলে নাজিম বেচে নেয়নি ভিক্ষাবৃত্তি।

আবার এদিকে সেই সিএনজি অটোরিক্শা চালাতে তাকে সহযোগীতার বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে মহিলা এস আই হ্যাপী বেগম বলেন, তার কাছে অনেক সময় গাড়ীর কাগজ ঠিক না থাকলে এবং চট্টগ্রাম নাম্বারের গাড়ী মহানগরে প্রবেশ করলে সেই প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমরা তাকে জরিমানা করিনা এবং সহযোগীতা করে থাকি।

এলাকার বয়োবৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার (৭০) বলেন, নাজিম পা প্রতিবন্ধী হলেও তার গাড়ি চালনায় দক্ষতা রয়েছে। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক অটোরিকশাসহ নানা পেশায় কাজ করছে। তবে সেই সরকারের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে থাকায় সংসার চালাতে একটু সুযোগ হয়।

ছনহরা এলাকার সমাজসেবক জলিল আহমদ বলেন, নাজিমের অর্থনৈতিক দ্বৈন্যতা রয়েছে। বিত্তশালীরা যদি তাকে একটি অটোরিকশা কিনে দিত তাহলে তার এ সংকট কেটে উঠতো। ভালভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারতো।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *