২৪ ঘণ্টা, ডেস্ক নিউজ : ভোক্তাদেরকে নিরাপদ মানসম্মত খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য সঠিক মান ও সঠিক পরিমাপে ক্রয় নিশ্চিতে দেশব্যাপী বিএসটিআই এর নিয়মিত সার্ভিল্যান্স টিম ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অবৈধ উৎপাদনারী, সরবরাহকারী, ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
তারই অংশ হিসাবে রবিবার (০৪ অক্টোবর) বিএসটিআই চট্টগ্রাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম কর্তৃক যৌথ বাজার সার্ভিল্যান্স অভিযানের মাধ্যমে নগরীর রেয়াজউদ্দীন বাজারে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ফলের দোকান, মাংশের দোকান, ও মুরগির দোকান যাচাই করা হয়।
যাচাই কালে মের্সাস আলমগীর স্টোর, ৬০৪ স্টেশন রোড়, রেয়াজ উদ্দীন বাজার কর্তৃক বিএসটিআই মান সনদ বিহীন মুধু বিক্রয়, বিতরণ ও ও সংরক্ষন করার অপরাধে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন ২০১৮ অনুযায়ী ১টি, হাজী জালাল স্টোর, ১০৬ সোলতান মার্কেট, রেয়াজউদ্দীন বাজার, চট্টগ্রাম কর্তৃক মোড়কজাত নিবন্ধন সনদ বিহীন অবৈধ ঘি বিক্রয়, বিতরণ ও সংরক্ষনের অপরাধে এবং মোর্সাস নাছিরের মুরগির দোকান(নাছির চিকেন হাউজ), জলিল টাউয়ার, আবদুল্লাহ সিদ্দিকী রোড়, রেয়াজ উদ্দীন বাজার, চট্টগ্রামকে ওজনে কারচুপি করায় প্রতিষ্ঠান দু’ টির বিরুদ্ধে “ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইন ২০১৮” অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযান পরিচালনা কালে বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক নুর মোহাম্মদ মোস্তফা, পরিদর্শক মুকুল মৃদা, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস ও ক্যাব পাঁচলাইশ থানার সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
নগরীর প্রশাসনের নাগের ডগায় নগরীর অন্যতম পাইকারী ও খুচরা বাজার বেয়াজউদ্দীন বাজারের মতো জায়গায় এখনও বাটখারা দিয়ে ওজন পরিমাপ করা হচ্ছে। যাতে দেখা যাচ্ছে মুরগিতে ১ কেজিতে দেয়া হচ্ছে ৭৭৬ গ্রাম আর ২ কেজিতে ১.৫৩৯ গ্রাম। বাজার তদারিকেতে উপস্থিত ক্যাব নেতৃবৃন্দ হতবাক হয়ে যান কিভাবে প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজনের নজরদারি সত্বেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা কিভাবে এ ধরনের প্রতারণা করে যাচ্ছেন।
বিএসটিআই এর “ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইন ২০১৮” অনুযায়ী বাজারে বাটখারার পরিবর্তে ডিজিটাল স্কেল ব্যবহার করার কথা এবং ওজন পরিমাপ যন্ত্রটির মান বছরে একবার বিএসটিআই কর্তৃক ক্যালিব্রেশন/পরিক্ষীত হবার কথা থাকলেও কোনটিই করা হয়নি। অধিকন্তু পরিমাপ যন্ত্রটির ক্যালিব্রেশন/পরীক্ষার স্টিকার/সনদটি দৃশ্যমান স্থানে লটকানোর কথা থাকলেও সাধারনত তা মানা হয় না। ব্যবসায়ীরা এমন ভাবে স্টিকারটি রাখেন যাতে শুধুমাত্র বিএসটিআইএর কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখতে পান। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা ওজনে কারচুরি শিকার হচ্ছেন।
বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক প্রকৌশলী সেলিম রেজার সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ল্যাব) সর্দার শামীম সওদাগর, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব পাঁচলাইশের সাধারন সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর ও চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ওয়ানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্পাদক ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, ক্যাব যুব গ্রুপের শেখ জাবের আল মিজান প্রমুখ।
সভায় বলা হয় ভোক্তারা খাদ্য-পণ্য ছাড়াও ক্রেতারা ওজন ও পরিমাপে কারচুপির শিকার হলেও প্রতিকার পাওয়া দুস্কর। ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্রগুলিতে ডিজিটাল উপায়ে কারচুপি করা হচ্ছে। আর ওজন যন্ত্রটি বিএসটিআই থেকে ক্যালিব্রেশন করার পর স্টিকারটি যথাযথভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে না। ফলে ভোক্তারা বৈধ ক্যালিব্রেশণ যন্ত্র দিয়ে পণ্য ক্রয় করার বিষয়ে জানতে পারছে না। ভোক্তাদেরকে ওজন ও পরিমাপকে কারচুপি বন্ধে বাজারভিক্তিক ব্যবসায়ীদের সাথে সচেতনতা সভা আয়োজন করা ও যৌথভাবে ওজন ও পরিমাপক মনিটরিং জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও অনেকগুলি খাদ্য-পন্য ব্যবসায়ীরা একটি পণ্যের লাইসেন্স নিয়ে ৮/১০ পন্য বাজারজাত করছে। আবার ব্যবসায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে আউট র্সোসিং করে খাদ্য-পণ্য বাজারজাত করছেন। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলি যে উৎস থেকে খাদ্য-পণ্য সংগ্রহ করছেন তার মান বিএসটিআই কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত নয়। এ ধরনের বিষয়গুলি রোধে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করা এবং খাতঅনুযায়ী প্রাপ্ত অনিয়মগুলি সভায় উপস্থাপন করা এবং বাজার মনিটরিং বিষয়গুলি অগ্রাধিকার ভাবে সমাধান করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
ক্যাব নেতৃবৃন্দ নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য পণ্য নিশ্চিতে অত্যধুনিক মান পরীক্ষাগার সুবিধার বিষয়টি উত্থাপন করেন। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সিংহভাগ খাদ্য-পণ্য আমদানি হলেও অধিকাংশ পণ্যের মান পরীক্ষা করা হয় ঢাকায়। সেকারনে ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এবং ব্যায় বাড়ছে। বিএসটিআই আঞ্চলিক পরিচালক জানান ভবন সংকটের কারনে চট্টগ্রামে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকার পরেও পণ্যের মান পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। ভবন সংকট দূরীভুত হলে এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে। পরে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বিএসটিআইএর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন মান পরীক্ষায় ল্যাব এর সম্প্রসারিত সুবিধাগুলি পর্যবেক্ষন করেন।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
Leave a Reply