চট্টগ্রামে উর্ধমুখী সবজির বাজার, ঝাঁজ বেড়েছে কাঁচা মরিচের

রাজীব সেন প্রিন্স : অস্থির হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সবজির বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে হু হু করে বাড়ছে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম। আলু ও মিস্টি কুমড়া ছাড়া কোনো সবজিই মিলছেনা কেজি ৫০ টাকার নিচে। বাজারে পর্যাপ্ত সবজি থাকলেও দাম না কমা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

এদিকে বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন ক্রেতারা। কাঁচা মরিচের ঝাঁজ বাড়তে বাড়তে তিনগুন দামে ঠেকেছে। ঝাল খেতে চাইলে কেজিতে ৩০০ টাকা দরে কিনতে হবে কাঁচামরিচ।

চট্টগ্রাম নগরীর কাজিড় দেউরি, রেয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার ও কর্ণফুলি মার্কেটের কাচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব ধরনের সবজিতে কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা বেড়েছে।

আলু এবং মিস্টি কুমড়া ছাড়া বেগুন, বরবটি, করলা, শিম, ঢেড়শ ও ঝিঙেসহ প্রায় সব সবজি কিনতে ৫০ টাকার উদ্ধে দাম হাঁকছে বিক্রেতারা।

পাশাপাশি গত সপ্তাহের তুলনায় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও উদ্ধমুখী। বাজারে মাছ এবং ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়ে গেছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের।

শুক্রবার (৯ অক্টোবর) কাঁচাবাজারে মিস্টি কুমড়া ও আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৪০-৪৫ টাকা দরে। বরবটি ৮০ থেকে ৯০, বেগুন ৮০, ঢেঁড়স ৮০, চিচিঙ্গা ৬০, পটল ৮০, ঝিঙ্গা ৮০, ছোট কচু ৭০, কাঁচা পেঁপে ৫০, লাউ ৫০, মুলা ৬০, বাঁধাকপি ৭০ এবং ফুলকপি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তাছাড়া বাজারে নতুন সবজি হিসেবে ২০০ টাকা কেজি দরে শিম, ১৩০ টাকা দরে টমেটো, শসা, কাঁকরোল, গাজর বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকা দরে। প্রতি আঁটি লাল শাক ৩০ টাকা, কলমি শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা। ডাটা শাক ৩০ টাকা, পালং শাক ৩০ টাকা এবং লাউ শাক ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতারা জানান, সবজির সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি দামে কিনতে হয় ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়।

অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, করোনায় আয় কমেছে সবার। চাকরি গেছে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি দিয়েছেন। তারপরও অস্বাভাবিকভাবে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ভবিষ্যতে না খেয়ে মরার উপক্রম হবে বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ। আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই সরকারের নজরদারির অভাবকে দায়ী করছেন।

বাসা থেকে সকালের নাস্তা সেরে হাসিমুখে বাজারে এসেছিলেন গৃহবধু শিল্পী দেব। প্রায় ৫০ মিনিট বাজার ঘুরে এক কেজি লটিয়া মাছ এবং এক কেজি আলু নিয়েই বাড়ি ফিরছেন। কাজিড় দেউরি বাজারের সামনে কথা তিনি এভাবেই জানান।

আবুল হাসনাথ নামে এক চাকুরীজবির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, একেতো করোনায় অর্থনৈতিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। তার উপর এক কেজি কাঁচা মরিচ যদি তিনশ টাকা কেজিতে কিনতে হয় তখন কার না মাথা ঠিক থাকে?

তিনি বলেন, সবজির বাজারের প্রতিটি সবজির দাম বাড়তি দেখে ভেবেছিলাম মাছ বা মাংসের বাজার করবো। কিন্তু তারও উপায় নেই।

বাজারে মাছের দামও বেড়েছে। ৫শ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৫০০-১ হাজার টাকা, চিংড়ি ৪০০-৬০০ টাকা, পাবদা ৫৫০ টাকা, লইট্যা ১২০-১৩০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০-১৪০ টাকা, রুই ১৫০-২০০ টাকা, কাতলা ২২০-২৫০ টাকা, কোরাল ৬০০ টাকা, কৈ ৪০০ টাকা, শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া মাংসের বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১১৫-১২০ টাকা, পাকিস্তানি লেয়ার ২৪০-২৫০ টাকা, সোনালী ২১০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে নতুন করে আরো এক দফা বেড়েছে চালের দাম। কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা বেড়েছে। তাছাড়া ৯৫-১০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে ৫-১০ টাকা ও ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা।

২৪ ঘণ্টা/রিহাম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *