বেতনহীন পাঁচ মাস

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ পাঁচ মাস ধরে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে পড়ে রয়েছে ৩৮ টন চিনি ও ৫১ টন মোলাসেস (চিটা গুড়)। ফলে বেতন ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিনি বিক্রি না হওয়ায় ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। তবে অল্প সময়ের মধ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে তারা।

এদিকে সুগার মিল করপোরেশনের নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেসরকারি চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি মিল কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিন জানা যায়, বিগত মৌসুমে সুগার মিলের চিনি অবিক্রীত থাকায় ও তহবিল সংকটের কারণে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে ৮১৯ জন শ্রমিক-কর্মচারীর পাঁচ মাসের বেতন-ভাতা দেয়া হয়নি। এতে জীবন ধারণে কষ্ট হলেও মিলে কাজ করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।

সুগার মিলের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৪ হাজার ২১৪ টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৩৫৮ টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৮ টন চিনি ও ৫১ টন মোলাসেস মজুত করা হয়েছে।

চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও সুগার মিল এলাকার অধীনে চাষকৃত ৮ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ৭৭ হাজার টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।সুগার মিলের শ্রমিক আব্দুল করিম বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। যার ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। বেতন না দিলে খাব কী? এরপরও কোনো উপায় না পেয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’

এদিকে, গত ১ অক্টোবর শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ঠাকুরগাঁও সুগার মিল পরিদর্শনে এসে বলেন, চিনিশিল্পকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় বহির্বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের চিনিকলের আদলে এই চিনিকলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

যান্ত্রিক বিভাগের শ্রমিক একরামুল হক বলেন, ‘জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো বেতন নেই। প্রতিদিন সকালে আসি এবং কাজ শেষ করে বিকেলে বাড়িতে ফিরে যাই। এত কষ্ট করার পরও যদি বেতন না পাই তাহলে কী করার আছে আমাদের? আমাদের জীবন কি জীবন নয়? মন্ত্রী পরিদর্শন করে গেলেন কিন্তু আমাদের জন্য কিছু করলেন না। আমরা চাই আমাদের বেতন-ভাতা যেন সময়মতো দেয়া হয়।’

মিলের হিসাব বিভাগের কর্মচারী কাজল রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বেতন নেই। বেতন চাইতে গেলে অফিসাররা বলে চিনি বিক্রি হয়নি, তাই বেতনও বন্ধ। এভাবে যদি সময়মতো আমাদের বেতন না দেয়া হয় তাহলে আমাদের সংসার চলবে কী করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সুগার মিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘চিনি বিক্রি করেই আমাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হয়। যদি সেটি না হয় তাহলে কী করে বেতন দিব। এখানে ধীরগতিতে চিনি বিক্রি হওয়ার কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান হবে।

২৪ ঘণ্টা/রিহাম/গৌতম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *