নিজস্ব প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর কাট্টলীর মুরাদ চৌধুরী বাড়ির মরিয়ম ভবনের ষষ্ঠ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন শ্বাসনালীসহ শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ৬৫ বছর বয়সী নারী পেয়ারা বেগম।
তার মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক রফিক উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, গতকাল রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে আরো ৬ জনের শ্বাসনালি পোড়া গেছে। তাঁদের অবস্থাও সংকটাপন্ন। হাসপাতাল থেকে তাদের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সাহায্য করা হচ্ছে। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতিও রয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে উত্তরকাট্টলীর যে বাসায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সোমবার সকালে সেখানকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন।
তাছাড়া ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ রোগীদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে ছুটে যান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।
এসময় তিনি জানান, বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকেই আগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে সঠিক কারন খুঁজে বরে করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ জন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে রবিবার (৮ নভেম্বর) রাতে উত্তর কাট্টলী এলাকায় মুরাদ চৌধুরীর মালিকানাধীন ‘মরিয়ম ভিলা’ নামে ছয়তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের সাতজনসহ মোট ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে সোমবার বেলা ১২টার দিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মরিয়ম ভবনের ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন শিপিং করপোরেশনে চাকরিজীবী মিজানুর রহমান। রাতে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনি, তার স্ত্রী, ৭ বছর বয়সী ও দেড় বছর বয়সী দুই শিশু, মা, ভাই এবং বোন দগ্ধ হয়। একই ঘটনায় তাদের বাসায় সাবলেট থাকা দুজনও দগ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন মিজানুর রহমান (৪২), সাইফুর রহমান (১৯), বিবি সুলতানা (৩৬), মানহা (২), মাহের (৭), পেয়ারা বেগম (৬০), রিয়াজ (২২), জাহান (২১) ও সুমাইয়া (১৮)।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার এনামুল হক বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা ওই বাসার লাইট-ফ্যানসহ বিদ্যুৎ সংযোগের প্রতিটি পয়েন্ট পোড়া দেখেছি।
এতে আমাদের ধারণা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। কারণ গ্যাসের পাইপলাইন এবং রান্নাঘরের চুলা আমরা অক্ষত দেখেছি। বাসায় কোনো গ্যাস সিলিন্ডারও ছিল না।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেছে স্থানীয়রা। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জহিরুল হক ভুঁইয়া বলেন, রবিবার রাত ১১ টার পর থেকে দগ্ধ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া শুরু হয়। মোট ৯ জন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন।
আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন বলেন, আগুনে এক পরিবারের সাতজনসহ মোট নয়জন দগ্ধ হয়েছে। কীভাবে আগুনের ঘটনা ঘটেছে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন লেগেছে বলে তারা ধারণা করছেন।
২৪ ঘণ্টা/রাজীব
Leave a Reply